ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আনক্লেইমড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে ২৪০ কোটি টাকা

আনক্লেইমড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে ২৪০ কোটি টাকা

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে ‘আনক্লেইমড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট’-এ ২৪০ কোটি টাকার বেশি পড়ে আছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অনেক অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা এসব অদাবিকৃত আমানতের মালিকের কোনো হদিস পাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অ্যাকাউন্টগুলোয় ১০০ টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত জমা রয়েছে। নির্দিষ্ট একটা সময় পর এ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে সরকারের কোষাগারে ১০৬ কোটি টাকার বেশি জমা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় গ্রাহক মারা গেলে বা নিখোঁজ হলে বা প্রবাসে চলে গেলে ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা টাকা তোলা হয় না। তাছাড়া অনেক সময় পে-অর্ডারের প্রাপকের নাম-ঠিকানার ভুলে বা অনিষ্পন্ন কোনো বিল পরিশোধ না হলে এমন যেকোনো দায় পরিশোধ না করা গেলে সেই অর্থও অদাবিকৃত থেকে যায়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৩৮ কোটি ১৩ লাখ সাত হাজার ২৬৩ টাকা জমা করে। একই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের কোষাগারে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার এক টাকা জমা করে। ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৪ কোটি ১৩ লাখ আট হাজার ৬৬৫ টাকা জমা করে। একই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের কোষাগারে ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ৩০৪ টাকা জমা করে। একইভাবে ২০২০ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৬ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ৭০৬ টাকা জমা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ সময় সরকারের কোষাগারে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ৯২৫ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমা করে। ২০২১ সালে ১১৩ কোটি সাত লাখ ৫৪ হাজার ৪০২ টাকা ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে। একই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ টাকা জমা করে। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ৯৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা জমা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সময় সরকারের কোষাগারে জমা করে ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ টাকা।

ফলে গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সর্বমোট ২৪০ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা জমা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে। একই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৭ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘আনক্লেইমড ডিপোজিট’ ১০৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৫৯ টাকা রয়েছে।

জানা গেছে, ‘আনক্লেইমড ডিপোজিট’ গ্রাহক বা তার উত্তরাধিকারীদের ফিরিয়ে দিতে প্রায় এক বছর হিসাবধারীর নাম, হিসাব নম্বর, টাকার পরিমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এ সময় কোনো দাবিদার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে তার অর্থ ফেরত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সরিয়ে ফেলার পর আরও এক বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ওই অর্থ ফেরত দিতে রাজি থাকে। প্রতিবছর এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অদাবিকৃত আমানত জমা নেয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে অন্তত ১২ বছর তিন মাস সময় দেয়া হয় অদাবিকৃত আমানত গ্রাহককে ফেরত নেয়ার জন্য। এরপরও যেসব আমানতের দাবিদার পাওয়া যায় না, সেসব আমানতের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) ৩৫ ধারা অনুযায়ী, ১০ বছর ধরে কোনো ব্যাংক হিসাবে লেনদেন না হলে এবং ওই আমানতের গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া না গেলে সে অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এ ছাড়া তাদের পরিশোধযোগ্য অর্থ, পরিশোধযোগ্য চেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিল এবং ব্যাংকের জিম্মায় রক্ষিত মূল্যবান সামগ্রী অদাবিকৃত অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে সরকার, নাবালক বা আদালতের অর্থ এ নিয়মের আওতায় পড়বে না।

গণনাকৃত অর্থ ও চেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিলের পাওনাদারদের পক্ষে কোনো ব্যক্তি এবং মূল্যবান সামগ্রীর আমানতকারীকে তার দেয়া ঠিকানায় রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে তিন মাসের লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ড্রাফট বা বিনিময় দলিলে পাওনাদারের ঠিকানা পাওয়া না গেলে আবেদনকারীর ঠিকানায় অনুরূপ নোটিস পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের ৩৫(৩) ধারা অনুসরণ করতে হবে।

নোটিস পাঠানোর তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি কোনো প্রাপ্তিস্বীকারপত্র বা উত্তর না আসে, তবে আইনের ৩৫(২) অনুযায়ী, অদাবিকৃত আমানত ও মূল্যবান সামগ্রী প্রতিবছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অদাবিকৃত আমানতের অর্থ সুদসহ চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করতে হবে এবং দেশি ও বৈদেশিক মুদ্রার আমানতের অর্থ পৃথকভাবে হিসাবায়ন করার নিয়ম রয়েছে।

ব্যাংকগুলো অবশ্য লেনদেনের নিরাপত্তার স্বার্থে ছয় থেকে দুই বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক হিসাবে লেনদেন না হলে ওই হিসাব ব্লক করে রাখে। এমন হিসাবের বয়স ১০ বছর হয়ে গেলে ব্যাংক থেকে গ্রাহকের স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানায় যোগাযোগ করে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয় জবাবের জন্য। তবে ব্যাংকগুলো বলছে, গ্রাহক প্রান্ত থেকে অনেক ক্ষেত্রে কোনো জবাব আসে না। কখনও কখনও ঠিকানা বদল করায় গ্রাহকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় না। অনেক সময় ঠিকানা ভুল থাকে। সঞ্চয়ী হিসাবের মতো মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রেও ১০ বছর সময় দেয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মেয়াদি আমানতের মেয়াদপূর্তির ১০ বছর পর গ্রাহককে খোঁজা হয়। খোঁজ পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ওই টাকা জমা দেয়। এভাবে ব্যাংকের লকারে থাকা মূল্যবান সামগ্রীও অদাবিকৃত হলে তা জমা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত