উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হয় না। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দুটি মিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। নানা বিবেচনায় বর্তমান সীমা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে এই ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গণভবনে গত রোববার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী বাজেটে শুল্ক-করসংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব আগামী বাজেটের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, এর একটি খসড়া প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর যেন করের চাপ না বাড়ে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৮৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। তাদের মধ্যে ২৯ লাখের মতো টিআইএনধারী প্রতিবছর নিজেদের আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে রিটার্ন দেন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) গড় মূল্যস্ফীতি হলো ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মানে হলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আগের অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এদিকে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৩তম সভায়
করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে তুলে ধরে এফবিসিসিআই বলেছে, একজন করদাতার সাধারণ জীবনযাপনের জন্য বার্ষিক যে পরিমাণ ন্যূনতম অর্থের প্রয়োজন, সে পরিমাণ অঙ্ক করমুক্ত রাখলে কর ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে এবং কর প্রদানে সক্ষম জনগণ কর দিতে এগিয়ে আসবেন। ব্যক্তিগত করভার কমালে সম্পদ ও মূলধন পাচারের প্রবণতা হ্রাস পাবে এবং সঠিক সময়ে আয় প্রদর্শন উৎসাহিত হবে; যা দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অধিক রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে।
এছাড়া, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করে। জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে বার্ষিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর নেই। তবে ৩ লাখের বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর রয়েছে। ১০ লাখের বেশি থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়। অন্যদিকে, নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করাদাতাদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।