বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিগত অর্থবছরের (২০২১-২২) বার্ষিক প্রতিবেদন ১১ মাসেও প্রকাশিত হয়নি। এতে দেশের পেট্রোলিয়াম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রতিবেদন ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশ হয়েছিল। তবে বিপিসির সচিব বলছেন, কমিটি দফায় দফায় মিটিং করায় সময় বেশি লেগেছে। প্রতিবেদন শিগগির প্রকাশ হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিপিসি জিটুজি মেয়াদি চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সাতটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে। পাশাপাশি সৌদি আরবের সৌদি আরামকো থেকে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি থেকে মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৬৭ মেট্রিক টন মারবান ক্রুড এবং ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল আমদানি করেছে। এতে ব্যয় ছিল ৫৮৪ দশমিক ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পেট্রোবাংলার আওতাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন গ্যাস কনডেনসেট নিয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি ও ফ্রাকশনেসন প্ল্যান্টগুলোতে এসব কনডেনসেট প্রক্রিয়াজাত করে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন। এসব আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২৫৭৯ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৬ সালে দেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা ছিল ১১ লাখ মেট্রিক টন। ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাক্কলিত চাহিদা দাঁড়ায় ৬৭ দশমিক ৭৩ লাখ মেট্রিক টনে। দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৩ লাখ মেট্রিক টন। জ্বালানি তেলে ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে, ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ কৃষি খাতে, ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ শিল্প খাতে, ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে, ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ গৃহস্থালি খাতে এবং ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ অন্য খাতে ব্যবহার হয়েছে। পরিবেশ দূষণ কমাতে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) রেগুলেশন অনুযায়ী সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য লো সালফার (শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) আমদানি শুরু করে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি ৪৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করেছে। এতে বিভিন্ন শুল্ক, কর, ভ্যাট, লভ্যাংশ ও উদ্বৃত্ত অর্থ খাতে ১৫ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে বিপিসি।