উজবেকিস্তানকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য উজবেকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা চালু করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রণালয়ে উজবেকিস্তানের উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। টিপু মুনশি বলেন, উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ ও সুবিধা ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি উজবেক বিনিয়োগকারীদের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী উজবেকিস্তানের উপপররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলেন, বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ভিসা সহজীকরণ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করতে পারবেন। সরকার টু সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভ সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইন্টার গভার্নমেন্টাল কমিশন’ যোগদান করবে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই সফরে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল থাকবেন বলেও জানানো হয়।

টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে উজবেকিস্তান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেন। তারপর থেকেই বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান অত্যন্ত দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কালের পরিক্রমায় এ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

২০১৯ ও ২০২২ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে তার তাসখান্দ সফরে আতিথেয়তার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, উজবেকিস্তান বিশ্বের মাত্র দুটি দ্বি-ভূমিবেষ্টিত দেশের মধ্যে একটি। এটি প্রাচীন সিল্ক রুটের ওপর অবস্থিত। দেশটি বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রধান উন্নত দেশসহ ১৫২টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং জেনেরিক ওষুধ আমদানি ছাড়াও তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ, সিরামিক পণ্য, আইসিটি পণ্য, হস্তশিল্প, চামড়া কৃষি, টাটকা ফল, শাকসবজি এবং কৃষি-যন্ত্র দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার বিশাল সুযোগ রয়েছে। সাক্ষাৎকালে উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী তাদের দেশে বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সূচকে সাফল্য অর্জন করেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বিশ্বে সুনাম ধরে রেখেছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উজবেকিস্তানে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে আরো বন্ধুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় অবস্থানে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির বিপরীতে উজবেকিস্তান থেকে ৮.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করে।