ডিসিসিআইতে ‘জ্বালানি নিরাপত্তা; ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’ ডায়ালগ

নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি পেতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের আহ্বান

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেছেন অস্থিতিশীল বৈশ্বিক ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সময়কালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা অন্যতম পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক জ্বালানি উৎসে আমাদের আরো বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে এবং রাষ্ট্রায়িত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলোর সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নে একটি পূর্ব অনুমানযোগ্য জ্বলানির মূল্য নীতিমালা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে জ্বালানি চাহিদা এবং সরবরাহের ভিত্তিতে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান’ পুনঃসংশোধনের আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সাত্তার।

গতকাল ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানি নিরাপত্তা; ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’বিষয়ক স্টেকহোল্ডার ডায়ালগ অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি অনুষ্ঠানে যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে এবং এলক্ষ্য পূরণে সরকার সব শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সংযোগ অব্যাহত রাখতে এরইমধ্যে পরিকল্পনা করছে এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে সরকারের পক্ষে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না, তাই গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে তিনি উদ্যোক্তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে শিল্প-কারখানা স্থাপন ও স্থানান্তরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস করা হবে এবং এ খাতে সরকার ভর্তুকি হ্রাসের পরিকল্পনা নিয়েছে, তিনি অবহিত করেন সরকার এরইমধ্যে একটি ‘মূল্য নীতিমালা’ প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রচুর সময় ও বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হলেও অনুুুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও জ্বালানি ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে শিল্প খাতকে সক্ষমতার সঙ্গে জ্বালানি ব্যবহারের আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বলেন, করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে জ্বালানি প্রাপ্তিতে স্বল্পতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং সেইসঙ্গে বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সরকারকে আরো কৌশলী হওয়া ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে আরো উদ্যোগ হওয়া আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার গৃহীত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এখনো গ্যাস-বিদু্যুৎ, পরিবহনসহ অন্যান্য সেবার শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি এবং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সব সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান, যেটি আমাদের উদ্যোক্তাদের শিল্পাঞ্চলে কলকারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করবে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে তা বিচ্ছিন্নকরণে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা বন্ধ করা না গেলে সত্যিকারের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

অনুষ্ঠানের আলোচনায় সামিট পাওয়ারের পরিচালক ফয়সাল করিম বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতে একটি সুনিদিষ্ট কর কাঠামোর অনুসরণের আহ্বান জানান। ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি ম্যাগাজিন’-এর সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অব্যবহৃত নিঃসরিত তাপ শিল্প খাতে ব্যবহারের প্রস্তাব করেন। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, জ্বালানির দাম বিষয়ে আরো স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন এবং জ্বালানির অনুমানযোগ্য মূল্যের বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা অপরিহার্য। ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, কার্যকর রোডম্যাপ এবং জ্বালানি প্রাপ্তি ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণ খুবই জরুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের জল ও স্থল সীমায় গ্যাস প্রাপ্তির প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে এবং এলক্ষ্যে অনুসন্ধানে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পখাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান এবং সৌরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেন। এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, কার্বন নিংসরন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমাদের অদূঢ় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ‘ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন’ স্থাপনে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।