৬ কারণে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দি অতিক্রম, সূচক ও শেয়ারদর বৃদ্ধি, লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের আগমণ এবং ব্যাংকগুলোর সক্রিয় ভূমিকার আবির্ভাব ইত্যাদি উপাদান শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বহন করছে। গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় এমনটাই প্রতিভাত হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম: গত সপ্তাহে অন্তত ৩০টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন করেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই ছিল বিমা খাতের কোম্পানি। গত সপ্তাহে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ১৫-২০ শতাংশ বেশি দরে লেনদেন করেছে। এছাড়া, ফার্মা খাতে সিলকো ফার্মা, ফার কেমিক্যাল; বস্ত্র খাতে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল-পিটিএল, ঢাকা ডাইং এবং অন্যান্য খাতে অলিম্পিক এক্সেসোরিজ, প্রাইম ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন করেছে। কোম্পানিগুলো কেবল ফ্লোর প্রাইস অতিক্রমই করেনি, বড় লেনদেনও দেখিয়েছে। যা ইতিবাচক বাজারের পূর্ব লক্ষণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহের শেয়ারবাজারের সার্বিক আচরণ ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। তারা আরও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিমা খাতের শেয়ার অনড় অবস্থানে ছিল। খাতটির সিংহভাগ শেয়ারই ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে বন্দি ছিল। এখন ২-৪টি বাদে বিমার সব শেয়ারই ফ্লোর প্রাইস ভেঙ্গে অনেক ওপরে লেনদেন হচ্ছে। বিমা খাতের সেই অচলায়তন ভাঙাটা শেয়ারবাজারের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।

লেনদেন বৃদ্ধি : চলতি বছরের শুরু থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের চড়া দাম এবং আরো নানা কারণে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করে। মন্দা অবস্থার কারণে লেনদেনও তলানিতে নেমে আসে। কোনো কোনো দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা হস্তক্ষেপেও বাজারের লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করা যায়নি। গত এপ্রিল থেকে লেনদেনে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। গেল সপ্তাহে সেই উন্নতি আরও বড় হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৯৩২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে লেনদেন হাজার কোটি ছাড়াতে পারে বলে বাজার বিশ্লেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। যা ইতিবাচক বাজারের পূর্ব লক্ষণ। সর্বশেষ ১০ দিনের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই সময়ে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে ৬৩৬ কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯৩২ কোটি টাকা। এভাবে লেনদেন বৃদ্ধি পেলে বাজার অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন।

সক্রিয় ভূমিকায় ব্যাংক : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় হওয়ার জন্য নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। যে কারণে বাজারের লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাদের কাছে সেই অর্থও রয়েছে। বর্তমানে বাজারের বেশিরভাগ শেয়ারই বিনিয়োগ উপযোগী। ব্যাংকগুলো এখন যদি বিনিয়োগে ফিরে তাহলে তাদের ভালো মুনাফা করার সুযোগ তৈরি হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি : গত এক বছর ধরে বিদেশিরা শেয়ারবাজারে কেবল বিক্রিই করেছেন। এ সময়ে তাদের কেনার চেয়ে বিক্রি ছিল বেশি। গত এপ্রিল মাসে এ ধারা হঠাৎ বদলে গেছে। এপ্রিল মাসে বিদেশিরা শেয়ারবাজারে বিক্রির চেয়ে অনেক বেশি কিনেছেন। এপ্রিল মাসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৮২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। তারমধ্যে তারা ১৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন এবং বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৫০ কোটি ৭৯ লাখ ৪ হাজার ২৭১ টাকার শেয়ার।

নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের ফেরা : দীর্ঘ মন্দার কারণে শেয়ারবাজারে ছোট-বড় অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি বাজারে সুবাতাস পরিলক্ষিত হওয়ায় তারা বাজারে ফিরতে শুরু করেছেন। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল সূত্রে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। দেশি-বিদেশি নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফেরা শেয়ারবাজারে সুবাতাসেরই লক্ষণ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহ : দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর ১৮(ছ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।