বাংলাদেশ থেকে দূর দূরান্তের প্রবাসীরা চলতি মে মাসে ১৯ দিনে ১১২ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার ১৯৬ কোটি (প্রতি বেলায় ১০৮ টাকা হিসাবে)। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত ১৯ দিনে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে এটি ১৮০ কোট ডলারে দাঁড়াতে পারে। যা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে কিছুটা বেশি। এটি তার আগের মাস মার্চ ও আগের বছরের মে মাসের চেয়ে কিছুটা বেশি। প্রবাসীরা এপ্রিলে পাঠিয়েছিলেন ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর মার্চ ও আগের বছরের মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন যথাক্রমে ২০২ কোটি ও ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় হ্রাসের পেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ঈদের মাসে লম্বা ছুটির কারণে রপ্তানি আয় কমলেও ঈদের পরের মাসে রপ্তানি আয় আবার বৃদ্ধি পাবে। মাসের প্রথম ১২ দিনে সে রকম লক্ষণ দেখাও গিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় সপ্তাহে এসে আবার কিছুটা কমলো।
ব্যাংকাররা বলেছেন, বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে আসায় বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎসে সবার দৃষ্টি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশি বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ করলে নিজেদের চাহিদা পূরণে পাশাপাশি বাড়তি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে, যা রিজার্ভে যুক্ত হয়। এ কারণে প্রবাসী আয়ে মনোযোগ বেশি।
গত ১৯ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯০ কোটি ১৮ লাখ ডলার ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ডলার।
প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানোর জন্য গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছিল। পদক্ষেপগুলো হলো, বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিপরীতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা; প্রবাসী আয় পাঠানো প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেয়া; প্রবাসী আয় বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা; অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেয়া; ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ।
এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম ‘সি’ পূরণ করার শর্ত শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয়। ঘোষণা ছাড়াই সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ২০ হাজার মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সব উদ্যোগের ফলে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এক মাসে কিছুটা বাড়লে পরের মাসে আবার ভাটা পড়ে প্রবাসী আয়ে। মে মাসের ১৯ দিনের প্রবাসী আয় ওঠা নামার মধ্যেই একটি মধ্যম ধারায় স্থিত হলো।