ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রানার মোটরসের ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি

রানার মোটরসের ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি

রানার মোটরস লিমিটেডের প্রায় ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিগত দুই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির এ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তা আদায়ের জন্য দাবিনামা জারির পাশাপাশি রানার মোটরস কর্তৃপক্ষকে আগামী ২৮ মে তলব করেছে ঢাকা উত্তরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিস।

জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের জন্য বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২০’ পেয়েছে রানার গ্রুপ। যার সহযোগী প্রতিষ্ঠান রানার মোটরস লিমিটেড অফিস ভাড়া ও উৎসে কর কর্তন হিসেবে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ বছরে ওই টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা ও ঢাকা উত্তরের ভ্যাট অফিসের প্রতিবেদন সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। যদিও রানার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তারা কোনো ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি। কাগজপত্রের কিছু জটিলতার কারণে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে রানার মোটরসের ভ্যাট বিভাগের ম্যানেজার আসলাম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আমরা মূসক চালান দিয়েই ক্রয় করেছি। কিন্তু ভ্যাট অফিস যখন হিসাব করে ওই চালান আমলে নেয় না, ট্রেজারি বিল বাবদ কত টাকা দেখিয়েছি, ওই মূসক চালান যখন আমরা উপস্থাপন করব তখন এটা স্বাভাবিকভাবে সমাধান হয়ে যাবে।

এত পেছনের বিষয় এখন কেন সামনে এসেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত ভ্যাট অফিস ৫ বছর পরপর অডিট করে। ওই অডিটে বিষয়টি বেরিয়েছে। আমরা ২৮ মে কাগজপত্র দাখিল করলে জটিলতা কেটে যাবে। অনিয়মের বিষয়ে ভ্যাট গোয়েন্দা ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রানার মোটরস লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের নিরীক্ষা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে অপরিশোধিত মূল্য সংযোজন করবাবদ (মূসক) ১১ লাখ ৯৮ হাজার ২০৫ টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপন করে তা আদায়ের সুপারিশ করে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

খাতের বিবরণ সূত্রে জানা যায়, অফিস ভাড়াবাবদ ২০১৯-২০ সালের প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৯০ টাকা। কিন্তু রানার কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৩ টাকা। এ বছরে অফিস ভাড়া খাতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৬০৭ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। একইভাবে ২০২০-২১ সালের ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৬ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে ঢাকা উত্তরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে।

অন্যদিকে, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎসে কর কর্তন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ৪২ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। দুই খাত মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৪৩০ টাকার ভ্যাট প্রযোজ্য হলে রানা অটোমোবাইলস জমা দিয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৮ হাজার ২২৫ টাকা। সে হিসাবে ১১ লাখ ৯৮ হাজার ২০৫ টাকার ভ্যাট ফাঁকি বা অনাদায়ি হিসেবে রয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বেরিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে বলেও জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়, মূসক বা নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী রানার মোটরস লিমিটেড ওই টাকা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ৭৩ ধারা অনুযায়ী দাবিনামা জারির মাধ্যমে আদায়যোগ্য বলে মতামত দেয়। প্রতিবেদনে গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি মূসক বা ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ এর ধারা ৪৯ ও ৫০ এবং বিধিমালার বিধি ২৫, ৩৯ ও ৪০ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-এর ধারা ৭৩ অনুযায়ী ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিস দাবি সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে।

এ বিষয়ে ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। দর্শানো নোটিশ জারির পর রানার মোটরস লিমিটেডের বক্তব্য ও আপত্তির স্বপক্ষে প্রমাণিক দলিলসহ লিখিতভাবে ১৫ দিনের মধ্যে জানানোর পাশাপাশি আগামী ২৮ মে সকালে কোম্পানির প্রতিনিধিকে হাজির হওয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও কোম্পানির বক্তব্য না পাওয়া যায় তাহলে ভ্যাট অফিস দাবিনামার বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই বলে ধরে নেবে এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এর আগে ২০২২ সালে রানার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের ৭০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিক্রয়ের গোপন তথ্য উদ্ঘাটন করেছিল ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্তে প্রায় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ার পর ওই বছরের ১১ মে ভ্যাট আইনে মামলা হয়। পরবর্তীতে যা আইন অনুসারে নিষ্পত্তি হয়েছিল বলে জানা যায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ২০০০ সালের জুলাইয়ে একটি প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০০০ সালের পর থেকে মোটরসাইকেলের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী হিসেবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। পরে এটি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পাবলিক লিমিটেড সংস্থা হিসাবে রূপান্তরিত হয় এবং মোটরসাইকেলের উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবসা শুরু করে। তিন ধরনের গ্রাহকের নিকট পণ্য বিক্রি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে- কর্পোরেট গ্রাহক, ডিলার ও নিজস্ব শো-রুম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত