পরিবেশ ছাড়পত্রের জটিলতায় দুই মাসে ক্ষতি ১৯০ কোটি টাকা
৫ লাখ টনে ৪৫টি ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
পরিবেশের ছাড়পত্রের জটিলতায় ৪৫টি জাহাজ কাটতে না পারায় গত দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছ থেকে দুই দফায় ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত দুই মাসে এ ছাড়পত্র না ৪৫টি জাহাজ গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাটতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এগুলো আমদানি করায় দৈনিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার মতো। আর দুই মাসে সেই ক্ষতির পরিমাণ ১৯০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য মতে, ২৪ মে পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনের ৪৫টি ক্র্যাপ জাহাজ। এতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ মার্চ ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩’ প্রকাশিত হওয়ার পর মধ্য মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ইয়ার্ডে জাহাজগুলো সৈকতায়ন হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে ২১ দিন পরপর অনুষ্ঠিত সভায় ছাড়পত্র দেয়া হয়। কোনো কারণে এক সভায় ছাড়পত্র নিতে না পারলে পরের সভার জন্য আরো তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে এ দীর্ঘসূত্রতার কারণেই গত দুই মাসে ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ কাটিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন ৭ লাখ টাকা ব্যাংককে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সেক্ষেত্রে ৪৫টি জাহাজের জন্য ইয়ার্ডগুলোর দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত তিন দিনে সৈকতায়ন হয়েছে বড় আকারের তিনটি ক্র্যাপ জাহাজ। এগুলোর ক্ষেত্রে আবার প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে কাজ না করালেও বেতন-ভাতা দিয়ে যেতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এতেও বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় জাহাজ ভাঙা শিল্পকে লাল থেকে কমলা শ্রেণিতে ফিরিয়ে নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোমিনুর রশীদ গত ১৫ মে এক চিঠির মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেন। কেন না, শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে জাহাজ ভাঙার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে শিল্প খাতটিতে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্টিল রড বা ইস্পাত শিল্পের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বিএসবিআরএ সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘সরকার গত ৫ মার্চ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে লাল তালিকায় সর্বশেষ ৭২ নম্বরে রাখা হয়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে। আর লাল তালিকায় নেয়ায় ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষমতা হারায় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়। এখন ছাড়পত্র নিতে হলে দুই-তিন দফায় ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। গত দুই মাসে ছাড়পত্র না পাওয়ায় বিভিন্ন ইয়ার্ডে বুধবার পর্যন্ত ৪৫টি জাহাজ আটকে আছে। জাহাজগুলোয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এভাবে চলতে থাকলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না।’
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ডলার কিংবা এলসি জটিলতায় জাহাজ ভাঙা শিল্পে অস্থিরতা চলছে। গত ফেব্রুয়ারির পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় বন্ধ থাকা ইয়ার্ডগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করছে। ছোট-বড় ক্র্যাপ জাহাজগুলোয় টনপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮০ থেকে ৬০০ ডলার। কিন্তু নতুন পরিবেশ বিধিমালার কারণে জাহাজগুলো সৈকতায়নের পরও অনুমোদন না পাওয়ায় উল্টো প্রতিদিন লোকসান গুনছে। এ জটিলতা দ্রুতই নিরসন করা না হলে আবারো স্থবির হয়ে পড়বে ইয়ার্ডগুলো। শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও বন্ধ করে দিতে হবে। এদিকে নতুন জাহাজ কাটা বন্ধ থাকায় চাহিদা তুঙ্গে থাকার পরও ইয়ার্ডগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী রি-রোলিং মিলগুলোয় ক্র্যাপ সরবরাহ করতে পারছে না। গত ৫ মার্চের আগে যেগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পেয়েছিল বিভিন্ন ইয়ার্ডে এখন কেবল সে জাহাজগুলোই কাটা হচ্ছে। সেগুলো থেকেই কিছু ক্র্যাপ সরবরাহ হচ্ছে রি-রোলিং মিলগুলোয়। এতে ইয়ার্ডগুলোর পাশাপাশি রি-রোলিং মিলগুলোর মালিকরাও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।