ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মূলধন সংকটে আট ব্যাংক

মূলধন সংকটে আট ব্যাংক

ব্যাংকের আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তার জন্য প্রভিশন বা সঞ্চিতি রাখতে হয়। ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ শতভাগ পর্যন্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে থাকে।

গত মার্চ প্রান্তিকে আটটি ব্যাংক মূলধন স্বল্পতায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এসব ব্যাংকের নিরাপত্তা ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। তবে কয়েকটি ব্যাংক উদ্বৃত্ত রাখায় নিট প্রভিশন হ্রাস পেয়ে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা হয়েছে। আর খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এই আট ব্যাংকে প্রভিশন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা অতিরিক্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে সরকার পরিচালিত বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিক শেষে প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ১১ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া সরকার পরিচালিত বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলেছে, নিরাপত্তা সঞ্চিতি রক্ষায় বরাবরের মতো এবারও ব্যর্থতার শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির মার্চ প্রান্তিকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। অবশ্য ব্যাংকটি ৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা নিয়ে খেলাপিতেও শীর্ষে অবস্থান করছে। বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ৪৯৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৬০ কোটি টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। এতে আমানতকারীদের ঝুঁকিও বাড়ে। এজন্য একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করা উচিত।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির অর্থ হলো তারা আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা না করেই মুনাফা ও লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করছে। আর ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির জন্য দায়ী মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। আর খেলাপি ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় নীতি অতিক্রম করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে ব্যাংকগুলোর জন্য ‘সাবস্ট্যান্ডার্ড’ ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং ‘মন্দ’ ঋণের বিপরীতে শতভাগ সঞ্চিতি রাখতে হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত