সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রানীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার সংকটকালে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দুই ধাপে ১০০ বেসিস হ্রাস করে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে রিভার্স রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রশমনে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বর্তমানে ৬ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকার রাখছে। এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ষান্মাসিক (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি আগামী ১৮ জুন ঘোষণা করা হবে। এবারের মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু চমক থাকছে। ষান্মাসিক মুদ্রানীতিতে ডলারের একক ডাম নির্ধারণ করা হবে। এতে ইচ্ছা করলেই যেকোনো অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক অথবা ভিন্ন ভিন্ন দামে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
ডলার কেনাবেচায় অভিন্ন মূল্য থাকবে। নতুন মুদ্রানীতিতে ৯ শতাংশ সুদের হারের সীমা তুলে দেয়া হবে। সুদহারে করিডোর পলিসি ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বেন্সমার্ক পদ্ধতি মেনে চলা হবে। এ রেট মেনেই ব্যাংকগুলো লেনদেন করবে।
কৃষি যন্ত্রাংশে কর অব্যাহতির প্রস্তাব : ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বড় আকারে সরকারের শেষ বাজেট নিয়ে এলেন তিনি। প্রস্তাবিত এ বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কৃষি যন্ত্রাংশসহ বেশকিছু যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, ড্রায়ার প্ল্যান্টার, সব ধরনের স্প্রেয়ার মেশিন ও পটেটো প্ল্যান্টার আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে ঘোষণা হতে যাচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত এই বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৫তম বাজেট এটি।
বাজেটে কৃষি খাতে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। নতুন বাজেটে কৃষি খাতে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সব কৃষককে স্মার্টকার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশাপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে অবদানের জন্য সরকার কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘এআইপি’ সম্মাননা পদকের প্রবর্তন করেছে এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এ পদক প্রদান করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, যা শতকরা বিবেচনায় মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে এই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে কোভিডকালীন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সংগ্রহ ও তার ব্যবস্থাপনা, দ্রুততম ভ্যাকসিন ক্রয় ও প্রয়োগ করেছি। জনগণকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দিতে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে।
এবার স্বাস্থ্যখাতে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সুলভ করতে দেশে প্রস্তুত হয় এমন ক্যানসার নিরাময়ের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। ইঞ্জেকশনের আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের প্রধানতম কাঁচামাল সিলিকন টিউব আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ডায়াবেটিক ব্যবস্থাপনার ওষুধ উৎপাদনে বিশেষ কিছু কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
শ্রম থেকে মুক্তি পাবে ২৮০০ শিশু : শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ চূড়ান্ত করেছে সরকার। এ পরিকল্পনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কর্মরত শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জন হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ আটটি খাতকে ‘শিশু শ্রম মুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এক লাখ শিশু শ্রমিককে উপানুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ চূড়ান্ত করেছি। এ পরিকল্পনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কর্মরত শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জন হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ আটটি খাতকে ‘শিশু শ্রম মুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শিশুদের জন্য কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে শিশুকক্ষ স্থাপন কার্যক্রম পূর্বের ধারাবাহিকতায় অব্যাহত থাকবে। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিকাল ৩টায় তিনি ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বাজেট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকে কর অব্যাহতি : হাতে তৈরি বিস্কুট প্রতি কেজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে। এছাড়া পার্টিকেক ব্যতিত অন্যান্য কেকের দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, হাতে তৈরি বিস্কুট এর অব্যাহতি সীমা প্রতি কেজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা এবং কেক (পার্টিকেক ব্যতিত) অব্যাহতি সীমা প্রতি কেজি ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।
মুস্তফা কামাল বলেন, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সেবা থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ১৫ শতাংশ মূসক হার হ্রাসপূর্বক ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি। এতে মিষ্টি বিক্রেতারা চাইলে দাম কমাতে পারবেন।
প্যাড-ডায়াপার তৈরির কাঁচামালে এবারও শুল্ক অব্যাহতি : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্যানেটারি প্যাড, ন্যাপকিন এবং ডায়াপারের কাঁচামালে মূল্য সংযোজন কর (আগামকর ব্যতীত) ও সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় স্যানেটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে উৎপাদনে ব্যবহৃত কতিপয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিতকরণের প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিরোধক ওষুধের উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কাঁচামাল আমদানিতে প্রযোজ্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দাম বাড়বে সিমেন্টের : ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি পর্যায়ে সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকার প্রতি টনের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ২০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেছেন। এতে বাজারে সিমেন্টের দাম বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন ক্লিংকারের জন্য ৫০০ টাকা শুল্ক দেন সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা। এ ছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা টনপ্রতি ৭৫০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের জন্য ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ এবং আমদানিকারকদের জন্য ৯৫০ টাকা করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ক্লিংকার আমদানির ক্ষেত্রে করহার অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে সিমেন্ট উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। পণ্যটির আমদানি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির স্বার্থে এই খাতে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।
‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বিকেল ৩টায় তিনি ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বাজেট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর ভরসা করছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ (অনুদান ছাড়া) দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম আর বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন অনুমোদন করা হবে। তার আগে বাজেট নিয়ে সংসদে ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। নতুন অর্থবছর চলবে নতুন বাজেটের বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী।