প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের উপর জানিয়েছে বিসিআই। গতকাল এ প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা এখন ৯ শতাংশের বেশি। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে জোর দেয়া হবে। কিন্তু দেশীয় শিল্প সক্ষমতা ও টেকসই করার কোন নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বিশেষ করে মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্পের উন্নয়নে কোন দিকনির্দেশনা নেই। মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্প করোনা এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫% ঝরে পড়েছে। রাজস্ব আয় প্রধানত বেসরকারি খাত হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে কিন্তু বর্তমানে উচ্চমূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, জ্বালানি সমস্যা কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে উৎপাদনশীল কারখানাগুলোর প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে। এদিকে বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রোথ নিম্নগামী। রপ্তানিও মন্থর এবং রেমিট্যান্সও ওই পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমদানি বিকল্প শিল্প এবং কীভাবে কারখানাগুলোর প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বিসিআই সভাপতি বলেন, শুধু আইএমএফের শর্তের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, সে দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের এখন স্থানীয় শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্পের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং টেকশই করা এবং কর্মসংস্থান ধরে রাখার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ করা হয়েছে, যা বিসিআই স্বাগত জানায় তবে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী কর বৎসরের ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে করযোগ্য নয়- এমন টিনধারীদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৬.২০% বেশি। অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যের মাত্র ৬১ শতাংশ। বিদ্যমান ডলারসংকট এবং আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় এই রাজস্ব আদায় নতুন অর্থবছরে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সরকারের আয় মূলত বেসরকারি খাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যেমে হয়ে থাকে। বিসিআই মনে করে, বেসরকারি খাতে জ্বালানি স্বল্পতা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং নিরবিচ্ছিন্ন সাপ্লাই না থাকার কারণে শিল্প কারখানাগুলো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। সাথে সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কন্ট্রাকশন পলিছির কারণে গত ১০ মাসে শিল্পগুলো মূলধনি যন্ত্রপাতি ৫৬%, মধ্যবর্তি কাঁচামাল ৩১.৩% এবং কাঁচামাল ৩১.৫% কম ঋণপত্র খুলেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা দরকার যেন কোনো অবস্থাতেই শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সরকারকে কম মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না করলে দেশিয় শিল্প তাদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে তাতে করে মূল্যস্ফিতি কমবে না সাথে সাথে বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে। যার ফলে এনবিআর এরও তাদের কর আহরন বাধাগ্রস্থ হতে হবে। বেসরকারি খাত এবং এনবিআরকে একসাথে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের প্রাকটিসেরও পরিবর্তন আনা বাঞ্চনীয়। সেক্টর ভিত্তিক থামরুলে গ্রোস প্রফিট (জিপি) ধরে শুল্কায়ন না করে কোম্পানি বিশেষে একচুয়াল অ্যাকাউন্টিং প্রাক্টিসের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করা উচিত। যেমন- একচুয়াল প্রফিট অথবা একচুয়াল লস মেনে কোম্পানি ওয়াইজ হিসেবে শুল্কায়ন করলে, যেসব কোম্পানি যারা কর দিচ্ছে না তারা কর দিতে আগ্রহী হবে। সাথে সাথে কর নেট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা মনে করি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে মোট করের ৮০% এর ওপর সংগ্রহ হয়ে থাকে অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৪৫% অন্যান্য জেলায় অবস্থিত। এসব অঞ্চলে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মানুষের কাছে গেলে কর আদায় বৃদ্ধি পাবে এবং করনেট প্রসারিত হবে। ব্যবসায়ী এবং এনবিআরকে দায়িত্ব নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসতে হবে।