ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

প্রথমবার টাকায় বৈদেশিক বিল পরিশোধ

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এই প্রথমবার বাংলাদেশ টাকায় বিদেশি বিল পরিশোধ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরো ভালোভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে টাকায় বিদেশি বিল পরিশোধ আরেকটি পদ্ধতির সূচনা করল বাংলাদেশ। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ঢাকা থেকে আশুলিয়া সংযোগকারী ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। চীন খরচের ৮৫ শতাংশ ঋণ হিসাবে ২ শতাংশ সুদে প্রদান করছে, যা ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে, ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ। এ প্রকল্পে বাকি ১৫ শতাংশ খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করছে। চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক ইউএস ডলারে ঋণের অংশ পরিশোধ করছে চীনা ঠিকাদার, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে, যেটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করবে।

বাংলাদেশ সরকারের ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে, প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমরা তাদের (ঠিকদার) টাকায় বিলটি গ্রহণ করতে রাজি করিয়েছি। কারণ, তাদের বাংলাদেশে কিছু ব্যয় করতে হবে। তারা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তার মতে, প্রকৌশলী ও কর্মীসহ ২৫০ জনের বেশি চীনা নাগরিক এবং ১ হাজার বাংলাদেশি এখন এই প্রকল্পে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত টাকায় বিদেশি বিল পরিশোধ অব্যাহত থাকবে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে আমাদের সামগ্রিক প্রকল্পের ৩০ শতাংশ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেছে এবং টাকার অবমূল্যায়নের অনুমতি দিয়েছে। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স থেকে মোট প্রাপ্তির তুলনায় উচ্চ আমদানি বিলের কারণে, গত বছরের একই দিনে ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ মে ২৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের নভেম্বরে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন এবং অক্টোবরে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা বা ১৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রথম চালান প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশের পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা। ৬০০ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে চলতি জুন মাসে। এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দেবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করবে এবং রাজধানী থেকে দ্রুত যাওয়া-আসা নিশ্চিত করবে। এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। উত্তরাঞ্চলের জেলা ছাড়াও ৩০টি জেলার ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে উপকৃত হবে। কারণ, এটি মানুষ এবং পণ্যের চলাচলকে আরো সহজ এবং দ্রুত করবে। এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নথিতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে ০ দশমিক ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের ৫ শতাংশেরও বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জুনের শেষ নাগাদ তা ৮ শতাংশে পৌঁছাবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট এবং হিসাব শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাসুদুল হক নিশ্চিত করেছেন যে, বেশিরভাগ বিদেশি ঋণ-অর্থায়নকৃত প্রকল্পের জন্য এটি স্থানীয় মুদ্রায় প্রথম বিল প্রদান। ঠিকাদারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ এবং এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগটি অর্থ সঞ্চালনেও সহায়তা করবে এবং স্থানীয় সরবরাহকারীরা সম্পূর্ণভাবে উপকৃত হবে।