নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচনি বছরেও নির্বাচনি বাজেট হয়নি। যে বাজেট হয়েছে, তা রাজনৈতিক উপাদান বিবর্জিত আমলাতান্ত্রিক বাজেট। গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষেরা যা পেল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচনের বছর উপলক্ষ্যে যে জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। নির্বাচনি বাজেট বলা হলেও এটি নির্বাচনি বাজেট নয়। আমি বলব এখানে পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা হয়েছে। আমি ছলনা বললাম না। ভর্তুকি, কর রেয়াত সব একসঙ্গে করে ফেলা হয়েছে, যাতে অঙ্কটা বড় দেখায়।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহি ছাড়াই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই প্রকৃত বাস্তবতাকে আমলে নেওয়া হয়নি, এমনকি নির্বাচনের সময় জনগণ তুষ্ট করার যে উদ্যোগ থাকে, তাও প্রস্তাবিত বাজেটে অনুপস্থিত। অন্যান্য সময় বাজেট প্রস্তাবের আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদ্যস্যদের বৈঠক হলেও এবার তা হয়েছে কি না, জানা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই আসছে আগামী নির্বাচন। আর নির্বাচনের আগের বাজেটেও প্রকৃত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হয়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যের কথাও জানানো হয়নি। এমনকি নিম্নআয়ের মানুষকে হয়রানিতে ফেলতে ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার অন্যতম উপাদান কলম উৎপাদনে ভ্যাট বসানো হয়েছে। এডিপিতে নেই জনগণকে তুষ্ট করার মতো কোনো প্রকল্প।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কোনো পরিসংখ্যানের বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক অভিলাষের প্রকাশ। এ বছর যে প্রবৃদ্ধি হার দেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, তা নির্বাচন উপলক্ষ্যে উদ্দীপনা তৈরির জন্য দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক বাজেটে আমরা গৎবাঁধা সমালোচনা করি। কিন্তু, আপনি একই রোগের জন্য ডাক্তারকে তো ভিন্ন ওষুধ দিতে বলতে পারবেন না। আমাদের সমস্যা তো একই। ২০০৬ সালে বাজেট প্রক্রিয়ায় ১০০টি দেশের মধ্যে আমরা ৩৮তম ছিলাম। আর এখন যদি দেখেন, আমরা ৯৫ নম্বরে চলে এসেছি। এই র্যাংকিং নির্ধারণ করা হয় বাজেট প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, সঠিক সময়ে বাজেটের অর্থ পাওয়া গেল কি না, দলিল আছে কি না, জনগণের অংশগ্রহণ আছে কি না ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন, যারা দাবি করেন, রাজনৈতিক কল্পকথা হিসেবে, আমরা যে বাজেট দিই, তা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করি, তথ্য-উপাত্ত তো তা সমর্থন করে না। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বড় ফারাক থেকে যাচ্ছে। যেটুকু আমাদের উন্নতি হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তাও তুলনীয় দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে নিতান্তই কম।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ড. দিবালোক সিংহ স্বাস্থ্য, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল হক সামাজিক সুরক্ষা খাত নিয়ে আলোচনা করেন। আর ব্যক্তি খাতে বাজেটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ড. আসিফ ইব্রাহিম।