নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা ১৮ জুন

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য সতর্ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ জুন বিকাল ৩টায় নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সূত্র বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তপূরণে নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে করিডোর প্রথার আওতায় তা বাজারভিত্তিক করা, বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট হিসেবে সুদকে বিবেচনায় নেয়া, টাকা ও ডলারের একক বিনিময় হার চালু এবং রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নের ঘোষণা দেয়া হবে এবারের মুদ্রানীতিতে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ সাশ্রয়ে নেয়া পদক্ষেপ অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেয়া হবে। গতকাল রোববার নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাজারে এমনভাবে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবার মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার এই দুই সূচকেই চরম অস্থিরতা চলছে। এছাড়া বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি ও রিজার্ভের অব্যাহত পতন নিয়েও অর্থনীতিতে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও এসব সূচকে সংস্কার ও উন্নয়নের শর্ত রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি প্রণয়নে চ্যালেঞ্জে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি রয়েছে। মনিটরি পলিসি নামে ৯ সদস্যের ওই কমিটির সভাপতি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। গতকাল কমিটির ৫৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে এটাই ছিল ওই কমিটির শেষ বৈঠক। সভায় মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার, ব্যাংকব্যবস্থায় তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতিসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মুখ্য সূচকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে মুদ্রানীতি কাঠামোও আধুনিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তগুলোর একটি হলো ব্যাংকের সুদহার নির্দিষ্ট করে না রেখে করিডর প্রথা চালু করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কাঠামোয় সুদহারের করিডোর প্রথা চালুর সুপারিশ করেছে দাতা সংস্থাটি। সে অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের প্রথম ষাণ¥াসিক হতে মুদ্রানীতিতেও সুদহারের করিডর প্রথা চালু করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই রকম করিডর ব্যবস্থার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে একটা হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের বিতরণ করা ঋণের সুদহার। এটাকে রেফারেন্স রেটসহ করিডর বলা হবে। অপরটি হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দেয়া-নেয়ার সুদহার। এটাকে বলা হবে পলিসি রেটসহ করিডোর, যা মুদ্রানীতি পরিচালনার টুলস হিসেবে ব্যবহার হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এত দিন রিজার্ভ মানিকে অপারেটিং টার্গেট বিবেচনার নিয়ে বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে মুদ্রানীতির কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তবে আগামী অর্থবছর থেকে এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট হিসেবে সুদহারকে বিবেচনায় নেয়া হবে। এর মাধ্যমে বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া আগামী মাস থেকে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ব্যবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে। মুদ্রানীতি কাঠামোয় সুদহারের করিডোর : পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মুদ্রানীতির আদলে মুদ্রানীতি কাঠামোয় করিডোর প্রথা চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় পলিসি রেটকে একটা পর্যায়ে রেখে সুদহারের একটা করিডোর দেয়া হবে। এক্ষেত্রে কলমানি বা পলিসি রেটের মতো শর্টটার্ম সুদহারকে টার্গেট করা হবে। এই রেটেই বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়নো-কমানো হবে, যাতে বাজারে অতিরিক্ত টাকা না থাকে, আবার ঘাটতিও না হয়। অর্থাৎ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে ওই করিডোরের আওতায় পৃথক রেট থাকবে। এর একটা হলো লেন্ডিং রেট, অপরটি হলো ডিপোজিট রেট। বাজারে যখন অতিরিক্ত তারল্য থাকবে, সেটা তুলে নেয়ার জন্য ডিপোজিট রেট প্রয়োগ করা হবে। আর যখন ব্যাংকগুলোয় অর্থের সংকট থাকবে, তখন তাদের অর্থ ধার দেয়ার জন্য লেন্ডিং রেট প্রয়োগ করা হবে।

ব্যাংকঋণের সুদহারের করিডর : আগামী জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ব্যবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে। ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত তিন শতাংশ পর্যন্ত যোগ করা যাবে। নতুন এ ব্যবস্থার নাম দেয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি অ্যাভারেজ রেট’ বা স্মার্ট।

চালু হবে একক বিনিময় হার : আগামী মুদ্রানীতিতে বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়ে ঘোষণা থাকবে।