রিজার্ভে যোগ হচ্ছে ১০২ কোটি ডলার

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছাড়া একটি দেশ জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারে না। একটি দেশের বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় রিজার্ভ থেকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মুদ্রার বিনিময় হারকেও নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার মাধ্যমে মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক রাখে। আবার সংকটকালে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস জোগায় রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বৈদেশিক মুদ্রার বড় মজুত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী অবস্থানে রাখে এবং গঠনমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সাধারণত অর্থনীতিবিদেরা কোনো দেশে তিন মাসের মোট আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমে থাকাও অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মনে করা হয়। কারণ, অতিরিক্ত রিজার্ভ অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আশানুরূপ না হওয়াকেই ইঙ্গিত করে। সাধারণত বেশির ভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমা রাখে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো, জাপানের মুদ্রা ইয়েন ও চীনের মুদ্রা ইউয়ানে কিছু মজুত রাখা হয়। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি ব্যাংক নোট, বন্ড, আমানত, ট্রেজারি বিল ও অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটিজের মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রাখা হয়। কোনো দেশ নিজ দেশেরই কোনো ব্যাংকে বা বিদেশে অবস্থিত কোনো ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংরক্ষণ করতে পারে। কয়েক মাস ধরেই বাজেট সহায়তা হিসেবে বিদেশি ঋণ গ্রহণে সরকার তৎপর। এর বড় কারণ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এমন বাস্তবতায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। চলতি জুন মাসের মধ্যেই অন্তত ১০২ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা আসছে। এ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়া রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক-এআইআইবির সঙ্গে ইআরডির পৃথক দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় গতকাল বুধবার। এই ৮০ কোটি ডলারের মধ্যে এডিবি এবং এআইআইবি সমান ৪০ কোটি ডলার করে ঋণ দিচ্ছে। টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি (সাবপ্রোগ্রাম-২) এর আওতায় এই ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা দিচ্ছে ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। শিগগির জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তির জন্য সব রকমের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৭ জুন প্রায় ২২ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। ইআরডির একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্থনীতির বর্তমান সংকট মোকাবিলা করার মতো জরুরি বিষয় তো রয়েছে। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার-এলডিসি থেকে উত্তরণের আগেই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সুবিধা হচ্ছে, এ ধরনের নমনীয় ঋণের সুদের হার অত্যন্ত কম। সুদের হার সাধারণত গড়ে ১ শতাংশের কাছাকাছি। রেয়াতকালসহ পরিশোধেও লম্বা সময় পাওয়া যায়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ওপর সুদের হার বেড়ে যাবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট-সিডিপির সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০২৬ সালে এলডিসি কাতার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, অতিমারি করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান পতন- অর্থনীতির এ বিরূপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদক্ষেপে বাজেট সহায়তার অর্থ কাজে লাগানো হবে। এডিবির ঋণে অর্থবিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট-সিপিটিইউসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা মজবুত করার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সেবা সহজ করার কাজে ব্যবহার করা হবে। মাত্র এক দিন আগে গত মঙ্গলবার ফিলিপাইনে এডিবির প্রধান কার্যালয়ে এ ঋণ অনুমোদন হয়। অনুমোদনের এক দিন পর ঋণের চুক্তি সইয়ের নজির খুব নেই। প্রায় একই ধরনের কর্মসূচি সাবপ্রোগ্রাম-১ এর আওতায় আগেই এডিবির কাছে ২৫ কোটি ডলার বাজেট পাওয়া গেছে। এআইআইবির ঋণও গত মঙ্গলবার অনুমোদন করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে চাপের মুখে আছে। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের এই বাজেট সহায়তা রিজার্ভ কিছুটা বাড়াতে সহায়তা করবে। গত এক বছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। রিজার্ভ সুরক্ষার পাশাপাশি অগ্রাধিকার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বাজেট সহায়তা চায়। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপিতে ৮৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা পরিমাণ বিদেশি ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।