বহুমুখী সংকটের মধ্যে আজ মুদ্রানীতি ঘোষণা
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুদ্রার বিনিময় হারের অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারের লক্ষ্য, কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি। এজন্য প্রয়োজন বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ বাড়ানো। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্য ও জ্বালানির দাম যেভাবে কমেছে, দেশে সেভাবে কমেনি। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ডলারের বিনিময় হার বেশি। আমদানি পণ্যের দাম বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। এ সময়ে আসছে নতুন মুদ্রানীতি। আজ ১৮ জুন (রোববার) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস, অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়বে কি না, বাজারে টাকার সরবরাহ কেমন থাকবে, কিংবা ডলার-সংকট কাটাতে কী কী করা হবে- এসব জানা যাবে। তবে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো রূপরেখা না থাকায় নতুন মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কী পদক্ষেপ থাকছে, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমে এসেছে। মূলত নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও গত এক বছরে রেপো হার বাড়িয়েছে। কিন্তু ডলারের বিনিময় হার বেশি থাকাসহ নানা কারণে তার প্রভাব দেশের বাজারে পড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ২ জুন বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ), প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স), বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে পদক্ষেপ থাকবে। বাজারে মুদ্রা সরবরাহবিষয়ক নীতিই মুদ্রানীতি। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার (যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়) কমিয়ে দেয়। এতে টাকা সস্তা হয়, ঋণ বাড়ে, মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসে। আবার বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে চাইলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুটি কাজই করা হয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়লে চাহিদা বাড়ে, এতে পণ্যের দাম বাড়ে, আবার অর্থের প্রবাহ কমলে পণ্যের দাম কমে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর জন্য সুদহার কী হবে, সেটাও আলোচনার বিষয়। কারণ, ব্যাংকে সুদহারের যে সীমা দেওয়া আছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তা তুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। ঘোষণা দেয়ার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ। কারণ, নীতিনির্ধারণী সুদহারে শিগগিরই তেমন পরিবর্তন হয় না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ও ডলারের দর ১০৪ টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট। এই দুই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৪, যা ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা শুরু হলেও এতে এখন বেশি প্রভাব ফেলছে ডলারের দাম।