দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্রগুলোর একটি ইনফরমেশন টেকনোলজি বা আইটি খাত। দিন দিন এ ক্ষেত্রটি বড় হচ্ছে। একই সঙ্গে উন্মোচিত হচ্ছে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকছে অ্যানিমেশন ও মাল্টিমিডিয়া, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট ও ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দিকে। প্রায় প্রত্যেকটি কর্পোরেট হাউজেই রয়েছে নিজস্ব আইটি বিভাগ। কার্যতই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তরুণ প্রজন্মও চাইছে আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে। বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। একই সঙ্গে নিয়োগকর্তারা খুঁজছেন দক্ষ কর্মী। ফলে এ খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে দরকার পর্যাপ্ত জানাশোনা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি সত্ত্বেও গত বছর ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রথাগত শ্রমবাজারের বাইরে পোল্যান্ড, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হারজেগোবিনা, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় নতুন শ্রমবাজার হিসেবে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় ২৩ লাখ ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১০ সালের দিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ছিল খুবই সামান্য। সম্ভাবনাময় এ খাতে কর্মসংস্থান বাড়তে থাকে ২০১১ সালের পর থেকে। ২০১৪ সালের দিকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এক লাখের ওপরে মানুষ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ প্রসঙ্গে বলেন, ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির পাশাপাশি আইসিটি খাতে বিশালসংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। ফেইসবুকভিত্তিক ই-কমার্সের নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন ইন ই-কমার্সের (উই) সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা জানান, এফ-কমার্সের সাথে প্রায় ১০ লাখ লোক কাজ করছেন। তাদের সংগঠনের ৫ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ উদ্যোক্তা নিজেরাই কোন কর্মী ছাড়া কাজ করেন। বাকী ২ লাখ উদ্যোক্তাদের একাধিক কর্মী রয়েছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, তাদের শিল্পে প্রায় ৬ লাখ কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ার, মার্কেটিং বিভাগে ৮ শতাংশ, হিসাব শাখায় ৮ শতাংশ এবং ২ শতাংশ ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশনের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ জানান, বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ তরুণ-তরুণী বিভিন্ন আইটি কোম্পানিতে কর্তব্যরত আছেন। ই-কমার্স কোম্পানির শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাব (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান জানান, ই-কমার্স শিল্পে প্রায় ৩ লাখ লোক কাজ করেন। এর মধ্যে ২১ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছেন। অন্যদিকে, ৫ হাজার লোক প্রত্যক্ষভাবে অফিসের বিভিন্ন পদে আছেন আর ১০ হাজার সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার এ খাতে কাজ করছেন। বাকি সবাই ডেলিভারি ম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। হাই-টেক পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, সারাদেশের সকল হাই টেক পার্কে প্রায় ২৮ হাজার লোক কাজ করছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (ব্যাক্কো) সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ৭০ হাজার লোক বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে দায়িত্বরত আছেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) পরিচালক মোহম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, দেশের হার্ডওয়ার শিল্পে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার লোক কাজ করছেন। অন্যদিকে চিফ টেকনোলজি অফিসারদের শীর্ষ সংগঠন সিটিও ফোরমের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, তাদের সংগঠনে ১ হাজার ২০০ কর্মকর্তা রয়েছেন। বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, একজন আইটি সিকিউরিটি হিসাবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে। এছাড়া নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আইটি কনসালটেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কোয়ালিটি এস্যুরেন্স, ক্লাউড আর্কিটেক্ট ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইনফরমেশন টেকনোলজি খাতে চাকরির সুযোগ অনেক। প্রায়শই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থী ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষে হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান হিসাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। অনেকেই এ পদটিকে আইটি সেক্টরে কাজের প্রথম ধাপ বলে মনে করেন। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসাবেও প্রাথমিকভাবে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। এর পরেই থাকে সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ। প্রতিষ্ঠানগুলো সিস্টেম এনালিস্ট পদে প্রতি বছরই লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। একজন আইটি সিকিউরিটি হিসাবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে। সাইবার আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সাইবার সিকিউরিটি পদে বিভিন্ন কোম্পানি লোকবল নিয়োগ দেয়। এছাড়া নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর, ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আইটি কনসালটেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কোয়ালিটি এস্যুরেন্স, ক্লাউড আর্কিটেক্ট ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে।