ঢাকার পুঁজিবাজারে ৯০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। অনেক দিন পর এমন সুবাতাস বইছে ডিএসইতে। টানা দুই কার্যদিবসে এমন লেনদেনে ফের আশার আলো দেখছেন মতিঝিলের ব্রোকার হাউজগুলোর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই শেয়ার বিক্রিতে মুনাফা করেছেন অনেক দিন পর। বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, গতকাল শুধু একদিনেই ৯০০ কোটি উঠেছে বিষয়টা এমন না, এটা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আস্তে আস্তে বাড়ছিল, যা আমাদের জন্য ভালো এবং সামনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা ভালো সংবাদ। তবে নতুন বছরের শুরুটা এমন হয়নি। বছরের প্রথম কয়েক কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়নি আশাব্যাঞ্জক হারে। বাড়েনি ডিএসই’র প্রধান সূচকও। মন্দাভাব কাটাতে গেল ৪ জানুয়ারি বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসে পুঁজিবাজার তদারকি সংস্থা বিএসইসি। সেখানে নতুন তহবিল নিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের ১২ কার্যদিবসে এসে ৯০০ কোটি টাকার ঘর ছাড়াল লেনদেন, যা গেল দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ বাজারে তৎপরতা বেড়েছে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া ব্যাংকে টাকা রেখে মুনাফা খুব বেশি করতে না পারায় অনেকেই নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন শেয়ারবাজারে। তবে বাজারে লেনদেন ও সূচক বেড়ে যাওয়ায় অনেক দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়তে শুরু করেছে। দ্রুত মুনাফার জন্য কমদামি জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর দিন সোমবার (১৯ জুন) দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। বিমা, আইটি খাতের পাশাপাশি ওষুধ, প্রকৌশল এবং খাদ্য খাতের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় সপ্তাহের দ্বিতীয় এ কর্মদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূচক বেড়েছে ৮০ পয়েন্ট। ফলে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন ও দাম কমার তুলনায় বেড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর ফলে গত বৃহস্পতি, রবি এবং সোমবার টানা তিন কর্মদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হলো। তবে তার আগের টানা চার কর্মদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর রোববার চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সালের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে পুঁজিবাজারে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করছে। মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের দেয়া ব্যাংকের শ্রেণিবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রভিশন ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করেছে। এছাড়াও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে বন্ড ইস্যু করে অর্থের সংস্থান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সমর্থন পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায় বলে জানিয়েছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। তাই তিনি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারকে গুরুত্বারোপ করায় বাংলাদেশ ব্যাংককে আন্তরিক অভিনন্দনও জানান। এরপর দিন গতকাল সোমবার বিমা খাতের তালিকাভুক্ত ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি কোম্পানির শেয়ারে দাম কমেছে তার বিপরীতে বেড়েছে ৫১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর অপরিবর্তিত রয়েছে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। আইটি খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর অপরিবর্তিত রয়েছে দুইটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। বিমা ও আইটি খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকৌশল খাতের ৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির, তার বিপরীতে দাম কমেছে দুটির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। প্রায় একই হারে লেনদেন হয়েছে ওষুধ এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারের। ডিএসইর তথ্য মতে, আজ দিনভর সূচক বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে বাজারটিতে ৩৫৫ প্রতিষ্ঠানের মোট ৯ কোটি ৮৯ লাখ ১৫ হাজার ১০৯ শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এ দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩৩ কোটি ২২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪১৮ কোটি ২০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ, আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কম হয়েছে। এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ২৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম। বিমা ও আইটিখাতসহ মোট পাঁচ খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।