প্রতি বছর সরকারের সঙ্গে বসে দাম ঠিক করে কমানো-বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু এবার ব্যবসায়ীরা সরাসরি চিনির নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ২২ জুন থেকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ ও খোলা চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি করবে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত সোমবার অ্যাসোসিয়েশন চিনির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির আমদানি মূল্য ৬৪০ থেকে ৬৫০ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে খালাস হচ্ছে এবং প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অপরিশোধিত চিনির এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ৫৫৩ মার্কিন ডলার। তবে এই দামও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২.৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে সরকার চিনির দাম বাড়িয়ে প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা এবং খোলা চিনি ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এই দামে ব্যবসায়ীরা খুশি ছিল না। কিন্তু বাজারে এখনো খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়; আর প্যাকেটের চিনির সরবরাহ নেই। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চলতি মাসের প্রথম দিকে চিনির দাম সমন্বয়ের জন্য সরকারকে চিঠি দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই চিঠি প্রদানের পর ট্যারিফ কমিশন তা পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালকে পাঠায় এবং মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সেটা অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দিয়ে জানায়। এবার সরকারের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে অ্যাসোসিয়েশন নিজেরাই নতুন দামের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের চিঠিতে জানায়, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিফাইনারিগুলোক অর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য প্রস্তাবিত এই মূল্য ২২ জুন থেকে কার্যকর করা হবে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেশি এবং ডলার সংকটে আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় এক উপস্থাপনায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৭.৬ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এ সময়ে মোট সরবরাহ ছিল ১৬.৮৮ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, ৭২ হাজার মেট্রিক টন চিনির সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। সারা বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এবার মিল মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম হবে ১৪০ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির দাম হবে ১৫০ টাকা। ২২ জুন থেকে এ দাম কার্যকর করতে চান ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদের আগেই চিনির দাম কেজিতে সার্বোচ্চ ২৫ টাকা ২২ জুন থেকে এ দাম কার্যকর করতে চান ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ রয়েছে। তবে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই চিনি বিক্রি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ভোজ্যতেল, চিনিসহ আরো কয়েকটি আমদানি পণ্যের দাম বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ঠিক করে। দামের অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি সরকারের দ্বারস্থ হয়। তবে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে এখন নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে মিল মালিকরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। দেশে সিটি গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ তেল ও চিনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
চিনির দাম না বাড়ানোর দাবি ক্যাবের : চিনির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে ক্যাব। ক্যাব জানায়, গত ১৯ জুন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চিনির দাম প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছে, যা আগামী ২২ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। চিনিকল মালিকদের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অন্যায় বলে মনে করে ক্যাব। তারা এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ এবং ভোক্তার স্বার্থ পরিপন্থী কিছু কার্যকর না করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায়। বাজারে বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। সরকার খুচরা বাজারে চিনি বিক্রির জন্য প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিল মালিক ও ডিলারদের কারসাজিতে এখন প্যাকেটজাত চিনি খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চিনিকল মালিকদের সংগঠনের এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ক্যাব মনে করে, আসন্ন কোরবানি ঈদের আগে ভোক্তাদের বেশি দামে চিনি কিনতে বাধ্য করে অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে চিনিকল মালিক সংগঠনটি এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চিনির মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চিনিকল মালিক সংগঠনটি চিনির বর্ধিত দাম নিজেরাই নির্ধারণ করে তা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে কার্যকর করার তারিখ জানাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত কমিশনকে অগ্রাহ্য করার শামিল বলে ক্যাব মনে করে। ক্যাব আশা করে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোক্তাদের অবস্থা চিন্তা করে চিনিকল মালিক সংগঠনের এই মুনাফালোভী সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে সরকার কর্তৃক আগের নির্ধারিত দামেই খুচরা বাজারে খোলা চিনি ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, দাবি অনুয়ায়ী চিনি আমদানি থেকে শুল্ক প্রত্যাহার ও হ্রাস করার পরও দাম বাড়ানোর এই দাবি অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলে মনে করে ক্যাব।