আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমেছে। গতকাল বুধবার (২১ জুন) ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) খাদ্যপণ্যটির মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নাসডাকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, আইসিইতে আগামী জুলাইয়ের অপরিশোধিত চিনির দর নিম্নমুখী হয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতি পাউন্ডের দাম স্থির হয়েছে ২৬ দশমিক ২২ সেন্ট। গত সপ্তাহে ভোগ্যপণ্যটির দাম ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছিল। তবে একই কার্যদিবসে আসছে আগস্টে সাদা চিনির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। টনপ্রতি দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ৭০১ ডলার ২০ সেন্টে। ২০২২-২৩ মৌসুমে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্রাজিলিয়ান চিনি ও ইথানল জায়ান্ট কপারসুকার। কারণ, ট্রেডিং ইউনিট অ্যালভেন দাবি করেছে, এ চক্রে বিশ্বব্যাপী চিনি বিক্রির ২৯ শতাংশই করেছে তারা।
এদিকে দেশে চিনির বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠছে। এক মাস আগে সরকার প্রতি কেজি চিনির দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এই দাম ব্যবসায়ীরা মানছেন না। বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নেই। কোরবানির ঈদের আগেই আজ থেকে নতুন করে চিনির দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিনিকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি সরকারিভাবে খোলা চিনির দাম ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটের চিনির দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে (বিটিটিসি) প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এদিকে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের খবরটি গত সোমবার প্রকাশ পায়। এতেই দীর্ঘদিন ধরে অস্থির থাকা চিনির বাজার আরো অস্থির হতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানেই রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চিনি আরো বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সামনে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় মজুত করে রেখে বাজারে সরবরাহ সংকট দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়তির কারণে ভোক্তারা চিনি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই দিন আগেও খোলা চিনি কেজি ১৩০ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারত। গতকাল বুধবার বেশ কিছু খুচরা দোকানে কেজিতে আরো ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু দোকানে ১৩০ টাকায়ও চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের তালিকা বলছে, খোলা চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। গত বছর একই সময়ে চিনি বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৪ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে বাজারে চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারে চিনি সরবরাহকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়তি। এজন্য দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করতে চান তারা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ১১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ২১.৯৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ৮ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল প্রতি টন ৫৫১.৯৫ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের ৮ জুন তা বেড়ে হয় ৬৭৩.১৫ ডলার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা আলোচনা করে দাম বাড়াবেন, এই ধারণা মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে যায় না। ব্যবসায়ীরা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইলে বরং সরকার চিনি আমদানি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখুক। তবে এমন যদি হয় কোনো কম্পানি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থিরতা তৈরি করছে, তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’