কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ২৬০ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পাবেন ট্যানারি মালিক

চামড়া রপ্তানি বাড়ছে

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ট্যানারিরা ২৫৯ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পাবেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত এ ঋণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১৮৪ কোটি টাকা কম। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৩৫ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা দেবে। সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ১২টি ব্যাংক এবারে চামড়া সংরক্ষণে ঋণ দিবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। শিল্পমালিকরাও বলছেন, কাঁচা চামড়া কেনা ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ঋণ সহায়তা প্রয়োজন। প্রতিবছর কোরবানি ঈদের সময় ঋণের ব্যবস্থা করতে সরকারের নীতি সহায়তা চান উদ্যোক্তারা। ট্যানারি শিল্প উদ্যোক্তাদের পূর্বের ঋণের বড় একটি অংশই খেলাপি থাকায় ব্যাংকগুলো সহজে ঋণ দিতে চায় না, যে কারণে ঋণ পেতে সরকারের সহায়তা চান তারা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান, মো. শাহীন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘চামড়া একটি পচনশীল পণ্য, যা দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে হয়, যার জন্য নগদ টাকা প্রয়োজন হয় কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা নিজস্ব ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়ে ব্যবসা করলেও কোরবানির সময় বেশি নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নিজস্ব ফান্ড থেকে ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।’ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংস্থা। এই খাতের শিল্প মালিকরা সারা দেশ থেকে আড়তের মাধ্যমে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন। প্রক্রিয়াকরণের পর উদ্যোক্তারা কেউ কেউ চামড়া শিল্পের সংযোগ শিল্পে বিক্রি করে ও কেউ কেউ আবার বিদেশে রপ্তানি করে। বিটিএর সূত্রমতে, ট্যানারি মালিক ও বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক মিলিয়ে সংগঠনটিতে বর্তমান প্রায় ৮০০ সদস্য রয়েছেন। সারা দেশে ১৮৬৬টি বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে। এর বাইরেও ছোট আকারে অনেক আড়ত রয়েছে, যারা মৌসুমি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঈদুল আজহার সময় চামড়া সংগ্রহ করে। আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহের পর নিজেরাই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে, পরবর্তীতে বড় ট্যানারির কাছে বিক্রি করে। রাজধানীর পোস্তা, নাটোরের রেলওয়ে বাজার, যশোরের রাজারহাট, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, রংপুরের তারাগঞ্জ, নওগা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, আমিনবাজার ও টঙ্গী- গাজীপুরের আড়তসমূহে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুদ করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে সম্ভাবনাময় খাত চামড়াশিল্প। এই শিল্পের সিংহভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহায়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীগুলোকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হয়। কমপ্লায়েন্স ইস্যু ও স্থানান্তরের কারণে চামড়া রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে রপ্তানি কমে যায়। তবে সম্প্রতি আবারো চামড়া রপ্তানি বাড়ছে, যাতে আগামীতে সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, দীর্ঘদিন পর চামড়া রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদাও এখন বেশ ভালো। রপ্তানি ত্বরান্বিত করতে ও বর্তমান ট্রেন্ড ধরে রাখতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এগারো মাসে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ১১২০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই রপ্তানির পরিমাণ সরকারের নির্ধারিত টার্গেটের কাছাকাছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১১৫ মিলিয়ন ডলার।