কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে মশলার দাম। দেশি পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, দারুচিনিসহ বেশিরভাগ মশলার দাম বেড়েছে। তার মধ্যে ক্ষেত্রভেদে আদা ও রসুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে মশলার দাম বাড়ায় কোরবানির ঈদে মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে। মশলার পাইকারি বড় বাজার রাজধানীর শ্যামবাজার। এ বাজার ঘুরে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার আদা পাওয়া গেল। মানভেদে এসব আদার দাম পাইকারি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারে তা খুচরায় প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। অথচ টিসিবি বলছে, এক বছর আগেও এসব আদা ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে খুচরায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আদার বড় জোগানদার চীন। কিন্তু বেশি দাম হওয়ায় চীনের আদা এখন দেশে নেই। ভারতের আদাও এখন বাজারে কম। মূলত এ কারণে বছরের ব্যবধানে আদার দাম দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে ৩৮০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। টিসিবির তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বেড়েছে শুকনা মরিচের দামও। এক বছর আগে দেশি শুকনা মরিচ যেখানে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই মরিচ শ্যামবাজারে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আরও বাড়তি দামে ৩৮০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে, যেমন কারওয়ান বাজারে বিদেশি শুকনা মরিচ ৪৮০ টাকা দাম হাঁকাতেও দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের জন্য এখনো বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে। শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬১ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারগুলোয় তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে তার এক বছর আগে দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে দেশি রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ২০২২ সালের ২২ জুন টিসিবির হিসাবে দেশি রসুন বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায়। অর্থাৎ ক্ষেত্রভেদে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে রসুনের দামও। কারওয়ান বাজার, শ্যামপুর ও সূত্রাপুর বাজারে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৬৫ থেকে ২২০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪১০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর টিসিবির হিসাবে বছরখানেক আগে ধনিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার-সংকটের কারণে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মশলা আমদানি করতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারেও কিছু কিছু মশলার দাম বেশি। আমদানি খরচও বেড়েছে। তাছাড়া সার, জ্বালানি ও শ্রমিক খরচ বাড়ায় দেশেও মশলার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেশি। মূলত এসব কারণে বেড়েছে মশলার দাম। শ্যামবাজারের দীঘিরপাড় বাণিজ্যালয়ের পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, গত কোরবানির চেয়ে এবার বেশিরভাগ মশলার দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারলে মশলার দাম এত বেশি হতো না।