কোরবানির পশুর হাট
ক্রেতাদের নজর অনলাইনে
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিএলএসের তথ্য অনুসারে, ঢাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি- ১৬২টি, চট্টগ্রামে ১৩৯টি এবং রাজশাহীতে ১১৩টি।
এবার প্রধান প্রধান অনলাইনে বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে পছন্দ হলেও বাস্তবে গরু দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন। দেখার পর যদি পছন্দ না হয়, তাহলে চুক্তি বাতিল করতে পারবেন ক্রেতা।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে শেয়ারে কোরবানির পশু কেনা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির ফলে লকডাউন শুরু হলে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির হার বেড়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আগের বেশি মানুষ শেয়ারে কোরবানির ব্যবস্থা করছেন। ঝঞ্ঝাট কম হওয়ায় অনেকে ঝুঁকছেন ই-কমার্স সাইটগুলোর দিকে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো দেশের ক্লাসিফাইয়েড বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম ইনভেটিভ এই আইডিয়াটি নিয়ে কাজ করলেও তেমন সাড়া না পাওয়ায় সফলকাম হতে পারেনি। পরবর্তী কোরবানির ঈদ অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশীয় মাংস উৎপাদনকারী ও বিপণন প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট একই উদ্যোগ হাটে নিলে ব্যাপক সাড়া এবং আইডিয়াটি সফলতার মুখ দেখে। ২০২০ সালের কোরবানির ঈদ পূর্ববর্তী সময়ে করোনা হানা দিলে এবং সরকার কর্তৃক জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল গরুর হাট বা অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট পরিচালনা করে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ২০২১ সালে বড় বড় ইকমার্স জায়ান্ট উক্ত ডিজিটাল বা অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির ঘোষণা দেয়। তা মধ্যে রয়েছে দেশের সবথেকে বড় ইকমার্স ইভ্যালি, দারাজ, কিউকম ইত্যাদি। অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বা কোরবানির পশু বিক্রি করে এমন প্রতিষ্ঠানেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রথম সারির ইকমার্স যারা কোরবানির গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, মহিষ বিক্রি করে থাকে তা হলো ইভ্যালি ডটকম ডটবিডি, বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, কিউকম ডটকম, ডিজিটাল হাট, দারাজ গরুর হাট, প্রিয়শপ, দেশি গরু, মাদল, হেক্সা ট্রেডিং, ই-বাজার, অথবা ডটকম, সদাগর, আজকের ডিল ইত্যাদি। বর্তমানে শেয়ারে কোরবানির পশু বিক্রির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ২০২০ সালে ৪৫ হাজার কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।। শেয়ারে কোরবানির ব্যবস্থা করছে দেশের অন্যতম শীর্ষ মাংস প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অনলাইনে কোরবানির গরু বিক্রিতে ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্যান্য সেবার পাশাপাশি শেয়ারে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে তারা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী, একটি গরু সর্বোচ্চ সাতজন মিলে কোরবানি দিতে পারেন। এই নিয়মে বেঙ্গল মিট ইতোমধ্যে শেয়ারে প্রায় ৪০টি গরু বিক্রি করেছে। বেঙ্গল মিটের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান শেখ ইমরান আজিজ বলেন, গতবারের তুলনায় এবার শেয়ারে কোরবানি গরুর সংখ্যা বেশ বেড়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের টার্গেটের ৩ ভাগের ২ ভাগ পূরণ হয়েছে’। এবার গরুর তুলনায় ছাগল বিক্রি বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষ কম খরচ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ বছর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৪৬ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৫১ হাজার ২৯৮টি কোরবানির পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত ২২ জুন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৬৩টি। দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ২৪ হাজার ২৭৩টি কোরবানির পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এরপর ঢাকার অবস্থান। রাজধানীতে ছবি আপলোড হয়েছে ১২ হাজার ৯১৬টি কোরবানির পশুর ছবি। ডিএলএসের তথ্য অনুসারে, ঢাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি- ১৬২টি, চট্টগ্রামে ১৩৯টি এবং রাজশাহীতে ১১৩টি। এ বছর ১ কোটি ৪ লাখ কোরবানির পশু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন ডিএলএস পরিচালক রেজাউল হক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও পশু কেনাবেচা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহা সামনে রেখে শনিবার পর্যন্ত ৬৪৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৫১ হাজার ২৯৮টি পশুর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯ হাজার ৬৩টি পশু বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পশুর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ হাজার ২৭৩টি। তারপর ঢাকা বিভাগে ১২ হাজার ৯১৬টি। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেশি ঢাকায় ১৬২টি, তারপর চট্টগ্রামে ১৩৯টি, রাজশাহীতে ১১৩টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে ৬৪৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তথ্য উল্লেখ করেছে, সব কটির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর বাইরেও অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে, যা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনে স্বল্প পরিসরে বেশ আগে থেকেই কোরবানির পশু বিক্রি হতো। তবে করোনা শুরু হলে মানুষের মধ্যে অনলাইনে পশু বিক্রি জনপ্রিয়তা পায়। যার ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস শুরু হলে ২০২০ সালে ঈদুল আজহায় অনলাইনে পশু বিক্রি বাড়ে। ২০২১ সালের ঈদে ৯১ লাখ পশু বিক্রি হয়। তার মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আওতায় ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। তার পরের বছর অনলাইনে বিক্রি কমে যায়।