ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কমেনি কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

কমেনি কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ফিরতে শুরু করেছেন লোকজন। যে কারণে সবজির বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ঈদের আগে থেকে বাড়তে থাকা কাঁচা মরিচের ঝাঁজ এখনো কমেনি।

গতকাল শনিবার রামপুরা, মধুবাগ ও মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাসখানেক আগেও মাত্র ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০০ টাকার উপরে। বিক্রেতারা বলেছেন, একদিকে কোরবানির কারণে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে জোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। লাগামহীন কাঁচামরিচের বাজার। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে এ দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। দেশে বেশকিছু দিন ধরেই লাগামছাড়া কাঁচামরিচের বাজার। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২৫ জুন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। তবুও কমছে না মরিচের দাম। বরং বেড়েই চলেছে কাঁচামরিচের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, যা ক্রয়সীমার একেবারেই বাইরে বলে দাবি ক্রেতাদের। তারা বলেন, প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ে। সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এরপরও কমছে না দাম। এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরা দায়ী। রুস্তম মোল্লা নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অসম্ভব হারে বাড়ছে। কেন মরিচের এত দাম হবে? ইতোমধ্যে সরকার মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। অন্য এক নারী ক্রেতা জানান, মরিচ ছাড়া তরকারি রান্না করা যায় না। অন্য মসলা না থাকলেও চলে; কিন্তু মরিচ ছাড়া তরকারি স্বাদ হয় না। কিন্তু যেভাবে মরিচের দাম বাড়ছে; মরিচ কেনাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এদিকে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, গত বেশ কয়েক দিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচামরিচের বাজার। মূলত বর্ষকাল হওয়ায় ও ঈদের কারণে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে কাঁচা মরিচের। এছাড়া পাইকারিতেই কেজিতে দাম পড়ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকার ওপরে। আলামিন নামে এক বিক্রেতা জানান, এক সপ্তাহ ধরে কোরবানির পশু আনা-নেওয়ার কাজে ট্রাকগুলো ব্যস্ত থাকায় মরিচের সরবরাহ তেমন হয়নি। পাশাপাশি এখন বৃষ্টির সময়। এ সময়ে এমনিতেই দাম বেড়ে যায় মরিচের। আরেক বিক্রেতা রহমত উল্লাহ বলেন, পাইকারিতে কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে ৫৫০ টাকার ওপরে। শ্যামবাজার থেকে ৫৫০ টাকায় ২০ কেজি মরিচ কিনে এনেছি। তবে দাম বেশি হওয়ায় ও ঈদের সময় হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে না। কাঁচা মরিচের এই ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করেও দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকলে; দাম কমে আসবে। অন্যদিকে কোনো কোনো সবজির দাম কিছুটা কমেছে। ঈদের সময় সবচেয়ে চাহিদার সবজি শসার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ০ টাকায়। অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙা কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা-করলা- বরবটি-পেঁপে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, লাউ ও চাল কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকায় প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে, যা গতকালও আরেকটু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা মাহমুদ বলেন, সবজির দাম নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কাঁচা মরিচের অত্যধিক দাম। তবে আজকে সবজির বাজারে দাম কিছুটা কমেছে মনে হয়েছে। এদিকে বাজারে বিভিন্ন মাছ নিয়ে বিক্রেতারা বসে থাকলেও ক্রেতা খুবই কম। অনেক মাছের দাম কিছুটা কম মনে হলেও বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়নি। আবার কিছু কিছু মাছের দাম বেড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের দাম। অন্যান্য সবজি না হলেও চলে; তবে মরিচ ছাড়া তরকারি স্বাদ হয় না। তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বেশি কেনাও সম্ভব না; আবার পরিমাণে অল্পও বিক্রি করতে চাইছেন না দোকানিরা। কাঁচা মরিচের বাজারে এমন নাজুক অবস্থায় কিছুটা বেপরোয়া বিক্রেতারাও। কারওয়ান বাজারে ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও মোহাম্মদপুরের টাউনহলে দাম হাঁকছেন কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। একই চিত্র রাজধানীর অন্যান্য বাজারগুলোতেও। বিক্রেতারা বলেন, পাইকারিতে কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার ওপরে। মূলত ঈদুল আজহার কারণে উৎপাদন পর্যায়ে শ্রমিক সংকট এবং অতিবৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। তবে বৃষ্টির প্রকোপ কমলে কাঁচা মরিচের দাম ভোক্তার নাগালে আসবে বলে জানান বিক্রেতারা। এদিকে মরিচের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৫ জুন থেকে মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবু কমছে না মরিচের দাম।

কাঁচা মরিচের কেজি ১ হাজার টাকা : দেশের অন্যতম কাঁচা মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। গতকাল শনিবার শৈলকুপা হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ১ হাজার টাকা দরে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, জন্মের পর থেকে তারা কোনো দিন কাঁচা মরিচের এত দাম দেখেননি। শৈলকুপা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস আলী জানান, তিনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেন। গতকাল শনিবার তিনি ১০ কেজিও মরিচ কিনতে পারেননি, যা পেয়েছেন তা ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। গতকাল শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে সকালে দাম ছিল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। ঈদের আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ৪০০ টাকা। এরপর দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকে। আবার একই দিন ৭ কিলোমিটার দূরে গাড়াগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। হাটের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ৮টার দিকে হাট শুরু হলে চাষিরা পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি করছিল ৭০০ টাকা। এরপর পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত