ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজস্ব ঘাটতি ৩৪১৫৮ কোটি টাকা

রাজস্ব ঘাটতি ৩৪১৫৮ কোটি টাকা

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব কাটছেই না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। তবে অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব ঘাটতি ৩৪ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শেষ মাস জুনে রাজস্ব বোর্ডকে আদায় করতে হবে ৮৯ হাজার ২২৫ কোটি টাকার রাজস্ব। ১১ মাসে ভ্যাট আদায়ে এগিয়ে সিগারেট খাত। অর্থবছরের শেষ এক মাসে রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) বলেছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতি থাকতে পারে ৫৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ডলার সংকট, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া, এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) কমে যাওয়া প্রভৃতি কারণে রাজস্ব আহরণের গতি শ্লথ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সংস্থাটি রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এই সময়ে সর্বোচ্চ রাজস্ব এসেছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে। এ খাত থেকে এসেছে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি থেকে ৮৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ থেকে এসেছে ৮৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভ্যাট আহরণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ভালো থাকলেও আমদানি-রপ্তানি এবং আয়কর খাতের রাজস্ব আহরণ একেবারেই তলানিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আমদানি-রপ্তানি খাতের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪৬৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও আমদানি-রপ্তানির এই আয় ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ মাসে আমদানি-রপ্তানি থেকে আদায় হয়েছিল ৮০ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার রাজস্ব। আলোচ্য সময়ে আয়কর খাতের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। তবে আদায় হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। ঘাটতি ৩ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই সময় এ খাত থেকে এসেছিল ৮২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। উচ্চ মূলস্ফীতি থাকার পরও অর্থবছরের ১১ মাস শেষে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এ খাতে ভ্যাট আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। যদিও ভ্যাটে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৯৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ মাসে রাজস্ব একটু বাড়ে। তবে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। বছর শেষে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এ ঘাটতি বিবেচনায় না নিয়ে নতুন বছরের বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে রাজস্ব বোর্ড। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিগারেট থেকে ১১ মাসে তিন হাজার ৫৯২ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এছাড়া ওষুধ থেকে ৪২৪ কোটি টাকা, পেট্রোলিয়াম গ্যাস থেকে ৩১৫ কোটি, পিওল পণ্য থেকে ১৫৫ কোটি, বেভারেজ থেকে ১৫৬ কোটি, এমএস রড থেকে ৯৯ কোটি, বিড়ি থেকে ৮১ কোটি, সিরামিক টাইলস থেকে ৮৬ কোটি ও সিমেন্ট থেকে ৬৮ কোটি টাকা আর এলপি গ্যাস থেকে ৪১ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত