ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাঁচামরিচ আমদানি ২১ টাকায় বিক্রি ৬০০ টাকার ওপরে

কাঁচামরিচ আমদানি ২১ টাকায় বিক্রি ৬০০ টাকার ওপরে

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে টানা ৫ দিন বন্ধ থাকার পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে শুরু হয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। প্রথম দিনেই ৬টি ট্রাকে ৬০ টন কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে ঢুকেছে। সন্ধ্যায় আরো কাঁচা মরিচ আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্তৃপক্ষ। রান্নার একটি অপরিহার্য উপাদান হলো কাঁচা মরিচ। বাটা কিংবা কাঁটা যেমনই হোক না কেন রান্নার স্বাদ বাড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। হঠাৎই বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্য কিনতে তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রান্নার স্বাদ বাড়াতে মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ মনে করেন কাঁচা মরিচের গুণ বেশি আবার কারো মতে শুকনো মরিচ বেশি গুণের। তবে কাঁচা ও শুকনো দুই ধরনের মরিচেই পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। দুইটির স্বাদও কিছুটা ভিন্ন। তবে শুধু স্বাদই নয় মরিচের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে। দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। কোরবানির কয়েকদিন আগে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন আর তা নেই। সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে চলে গেছে এই পণ্যটি। কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর তা আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং। কিন্তু আদতে কোনো লাভ হয়নি। ভারত থেকে কাঁচা মরিচ ২১ টাকা কেজি দরে দেশে আমদানি করলেও দাম কামানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচের দাম ২৫০ টাকা থাকলেও এখন এর কেজি ৪৮০ থেকে ৬০০ টাকা। ভারত থেকে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত ২৬ জুন মরিচ আমদানি করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৬৭১ কেজি। তাও আমদানি করেছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। ভারত থেকে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাঁচা মরিচ আমদানি করেছে তার প্রতি কেজির খরচ পড়েছে ১৯ সেন্ট বা ২১ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলফাজউদ্দিন অ্যান্ড সন্স প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করেছে ২৪ সেন্ট বা ২৬ টাকা কেজি দরে। দিনাজপুরের হাকিমপুরের সততা বাণিজ্যালয়ের খরচ পড়েছে ২০ সেন্ট বা ২২ টাকা এবং বগুড়ার বি কে ট্রেডার্সের প্রতি কেজির খরচ পড়েছে ১৫ সেন্ট বা ১৬ টাকা। আমদানি খরচের সঙ্গে কাস্টমস শুল্ক ও কর যোগ করলে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ৫৩ টাকা। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তর পরিবহন খরচ প্রতি কেজি ১০ টাকা ধরলে তা হয় ৬৩ টাকা। তিনটি হাত ঘুরে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে মুনাফা ধরলে আরো যোগ হয় ৩০ টাকা। মুনাফা আরো ৭ টাকা বাড়িয়ে ধরলেও কেজিতে তা ১০০ টাকার বেশি হয় না। গতকাল বগুড়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নতুন রোটারি বর্ষ উপলক্ষ্যে বিভাগীয় শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো উত্তর না দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কথা বলেন। লাগামহীন কাঁচা মরিচের বাজারে কেরানীগঞ্জে দাম কমেছে নামমাত্র। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। দাম প্রত্যাশিতভাবে না কমায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও কালীগঞ্জ বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই লাগামহীন থাকা দেশের কাঁচা মরিচের বাজারে দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করছে। কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মরিচের দাম। একদিন আগেও ৬৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ, আজকে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে এ দাম কতক্ষণ থাকবে; তা নিয়ে শঙ্কায় ভোক্তরা। তারা জানান, দাম কমলেও কাঁচা মরিচ এখনো বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আবারো বাড়তে পারে দাম। এ দাম আয় অনুযায়ী সাধ্যের বাইরে থাকায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। এক ক্রেতা জানান, মূলত আগামীকাল থেকে বর্ডার খোলায় মরিচ আমদানি শুরু হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমেছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার কতক্ষণ স্বস্তিতে থাকবে বলা মুশকিল। আরেক ক্রেতা বলেন, দাম কমলে কী হবে? এখনো কেজি ৫০০ টাকা। এভাবে চললে মরিচ খাওয়া বাদ দিতে হবে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। আধা কেজির নিচে মরিচ বিক্রি করছে না বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসতে শুরু করেছে। এতে কমছে দাম। এছাড়া ভারত থেকে মরিচ এলে দাম আরো কমবে। এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। কেজিতে কমেছে ১০০ টাকা। ভারতের মরিচ আসলে দাম আরো কমবে। বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড ভেঙেছে বলে মনে করে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করছি বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। একশ্রেণির অতি মুনাফাখোর, সিন্ডিকেটকারি অসাধু ব্যক্তির হাতে চলে গেছে বাজার।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজকে যদি আদার দাম বাড়ে তো কালকে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, আবার পরের দিন মশলার দাম বাড়ে। চাল, ডাল, দুধসহ নিত্যপণ্যের দাম প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিযোগিতা কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সরকারের ট্যারিফ কমিশনের কোনো ভূমিকা আছে বলে আমরা দেখি না। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর মাঝে মাঝে কিছু উদ্যোগ নিলেও সার্বিকভাবে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। কৃষি অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর ভূমিকা আজ পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করিনি।’ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেটকারী ব্যবসায়ীরা বাজার জিম্মি করে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাঁচা মরিচভর্তি ছয়টি ভারতীয় ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে। প্রতি ট্রাকে ১০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত