দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে বিদায়ি অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় পুঁজিবাজার থেকে ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। ডিএসইর তথ্য মতে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ডিএসইতে মোট ২৪১ কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছে। এই সময়ে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ লেনদেনের ওপর কমিশন থেকে উৎসে কর বাবদ সরকার পেয়েছে ২৭৬ কোটি ৬৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯২৮ টাকার রাজস্ব। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের একই সময়ে ডিএসইতে ২৪০ দিবসে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩৫৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৭ হাজার ১৮২ টাকা। অর্থাৎ, আগের বছরের চেয়ে ৮২ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ২৫৪ টাকা রাজস্ব কমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বছরজুড়ে দরপতন অব্যাহত থাকায় বিদায়ি বছরে ডিএসইর লেনদেন কমেছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর লেনদেন কমায় কর বাবদ ৮২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। লেনদেনের কমার পেছনে বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকাকে দায়ী করেছেন তারা। তারা বলেছেন, বাজার ভালো হলে লেনদেন বাড়বে। তখন সরকারও এ খাত থেকে রাজস্ব আরও বেশি পাবে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্য মতে, ৪০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১০ থেকে ২১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ও বন্ড ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে। যত লেনদেন বাড়বে, সরকার তত এখান থেকে রাজস্ব আয় পাবে বলে মন্তব্য করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল রাখতে হলে ভালো ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের কাছে ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবধান রাখার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। এরপরও সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। এসব কোম্পানি বাজারে এলে বাজার চাঙা থাকবে। লেনদেন ৫শ, ১ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৪ হাজার বা ৫ হাজার কোটি হলে সরকারও অনেক বেশি রাজস্ব পেত। সুতরাং, লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দুই ধরনের শেয়ার কেনাবেচা থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে। প্রথমটি হলো, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে রাজস্ব আয়। দ্বিতীয়টি হলো, বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচায় ব্রোকারেজ হাউজের ওপর আরোপিত কর।
ডিএসইর তথ্য মতে, দুই ধরনের করের মধ্যে প্রথমটি হলো- ৫৩ বিধি ধারা। এই ধারায় ডিএসইর স্টেক হোল্ডারদের অর্থাৎ ব্রোকার হাউজের প্রতিনিধিদের লেনদেনের ওপর কর দশমিক ৫ শতাংশ। এ খাত থেকে গত ১২ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৯২ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫১ টাকা। আগের বছরের একই মাসে এই রাজস্ব আয় ছিল ২৮৬ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৫ টাকা। অন্যদিকে, বিএসইসি রুলস ৫৩-এম অনুসারে স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন ও শেয়ার হস্তান্তর থেকে ৫ শতাংশ হারে কর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৮৪ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ১৭৭ টাকা। ২০২১-২২ সালের একই সময়ে এই রাজস্ব আয় ছিল ৭২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৭ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে সরকার এ খাত থেকে আয়ও বেশি করেছে। সব মিলিয়ে ডিএসই থেকে বিদায়ী বছরে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৭৬ কোটি ৬৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯২৮ টাকা। এই টাকা সরকারের কোষাগার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছে ডিএসই।