খেলাপি হলে অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে অন্য কোনো ব্যাংক খেলাপির অনুকূলে নতুন ঋণ ইস্যু করতে পারবে না। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হলে তার পদ শূন্য হবে। পাশাপাশি অর্থ আদায়ে খেলাপি পরিচালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে ব্যাংক। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা তার পরিবারের সদস্যদের ঋণের সুদ ও মুনাফা মওকুফ করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এসব বিধান রেখে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে আইনটি ৮ জুন জাতীয় সংসদে বিল আকারে পাস হয়। সংশোধিত আইনে আরো বলা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন কার্যক্রমে জড়িত বা আমানতকারীদের ক্ষতি করছে- এমন প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী যিনি দায়ী, তাকে অপসারণ করা হবে। অপসারণ হলে তিনি পরবর্তী তিন বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারবেন না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সঠিকভাবে প্রয়োগ না হলে এ আইন দিয়ে কিছু হবে না। জানামতে, ব্যাংক কোম্পানি আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে সংশোধনী পর্যায়ের কার্যক্রম আন্তর্জাতিকমানের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে করা হয়েছে। এখন এর সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসে নয়ছয় করার পর ধরা না হয়, সেক্ষেত্রে আইন করে কিছু হবে না। ব্যাংকের বোর্ডগুলো মানসম্পন্ন হতে হবে। পর্ষদের পরিচালকরা যেন একজন অপরজনের স্বার্থ না দেখেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের একজন অপরজনকে ঋণ না দেন এবং বেনামে ঋণ দেয়া বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। সংশোধিত ব্যাংক আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের আগ্রহ রয়েছে। আইনটি যুগোপযোগী করতে সংস্থার পক্ষ থেকে তাগিদ দেয়া হয়। আইনের গেজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কেউ খেলাপি হলে অন্য কোনো ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিতে পারবে না- এমন বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয়, খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে যৌক্তি কারণ আছে, সেক্ষেত্রে খেলাপি ব্যক্তির অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না। আরো দেখা যায়, ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি হলে তার পদ শূন্য ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট খেলাপি আপিল না করলে বা তার আপিল মঞ্জুর না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণগ্রহীতাকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য দুই মাসের সময় দিয়ে নোটিশ দেবে। নোটিশের পর দুমাসের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। এই মামলা টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হবে না। সেখানে আরো বলা হয়, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝতে পারে যে, ব্যাংক জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিধান লঙ্ঘন করছে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। এ বিধান লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রথম দিনের পর প্রতিদিন ব্যাংককে এক লাখ টাকা হারে জরিমানা গুনতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধিত) আইনে আরো বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া পরিচালক বা তার পরিবারের সদস্যদের নেয়া ঋণের ওপর সুদ ও মুনাফা মওকুফ করতে পারবে না ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক বা সদস্যদের শেয়ার আছে- এমন প্রতিষ্ঠান, পরিচালকদের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের সুদ বা মুনাফা মওকুফ করা যাবে না। যদি এটি করা হয়, তা হবে অবৈধ। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা বা উভয় দণ্ড হবে। এছাড়া কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ অব্যাহত রাখে সেক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় অন্য ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে একীভূত বা পুনর্গঠন করা হবে। খেলাপি প্রসঙ্গে বলা হয়, এখন থেকে ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঋণ খেলাপিদের তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে।