বিশ্ববাজারে এগারো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চালের দাম
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বের চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশেরও বেশি ভারত থেকে আসে। ২০২২ সালে দেশটি ৫৬ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে। ভারতে কৃষকদের অর্থসহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্বব্যাপী চালের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চাল উৎপাদনে প্রতিকূল আবহাওয়া প্রভাব ফেললে দাম আরো বাড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশেরও বেশি ভারত থেকে আসে। ২০২২ সালে দেশটি ৫৬ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে। তবে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভারত থেকে চাল রপ্তানি কমতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চালের রপ্তানি কমলে এই খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আরইএ) সভাপতি বিভি কৃষ্ণ রাও রয়টার্সকে বলেন, ‘সবচেয়ে সস্তায় চাল সরবরাহ করত ভারত। কিন্তু, নতুন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কারণে ভারতে দাম বাড়ায় অন্যরাও দাম বাড়াতে শুরু করবে।’
রয়টার্স বলেছে, ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল এবং প্রায় ৯০ শতাংশ চাল এশিয়ায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু, এল নিনো আবহাওয়া চক্রের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে। তবুও আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আগেই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বৈশ্বিক চালের মূল্য সূচক ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এই শীর্ষ ছয়টি দেশে রেকর্ড উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। তা সত্ত্বেও চালের দাম বেড়েছে। ওলাম ইন্ডিয়ার রাইস বিজনেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্তা বলেন, ‘এল নিনোর প্রভাব কোনো একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি প্রায় সবগুলো চাল উৎপাদনকারী দেশের উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।’নতুন মৌসুমে সাধারণ চালের জন্য ভারত সরকার কৃষকদের যে মূল্য দেয় তা গত মাসে ৭ শতাংশ বাড়ানোর পর ভারতীয় চাল রপ্তানি মূল্য ৯ শতাংশ বেড়ে ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতীয় কৃষকদের এই প্রণোদনার পর থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের রপ্তানি মূল্য ২ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেড়েছে। মূলত, এ বছর ভারতের প্রধান কিছু রাজ্যের নির্বাচন ও আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী চিনি, মাংস ও ডিমের দাম রেকর্ড বেড়েছিল। কারণ, উৎপাদনকারী দেশগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের লাগাম টানতে রপ্তানি কমিয়েছিল। এশিয়াতে চালের উৎপাদন নিয়ে পূর্বাভাস সত্ত্বেও বিশ্বের কিছু ট্রেডিং কোম্পানির আশঙ্কা, এল নিনো প্রধান চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন কমাবে। ওলামের গুপ্তা বলেন, ‘সরবরাহ সীমিত করায় ইতোমধ্যে চালের দাম বেড়েছে। উৎপাদন কমলে দাম আরও বাড়বে।’ ইউএসডিএ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান চাহিদার পর শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ চীন ও ভারতে চালের মজুত কমেছে। ফলে, ২০২৩/২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী চালের মজুত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৭০.২ মিলিয়ন টনে নেমে আসবে।