ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যাপ্ত মজুত

তারপরও বাড়ছে আলুর দাম

তারপরও বাড়ছে আলুর দাম

গেল দুই মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় আলুর দাম ছাড়িয়েছে ৫০ টাকা। আর দেশি জাতের আলুর দাম ৬০ টাকায় ঠেকেছে। সেই হিসেবে গত তিন মাসে প্রতি কেজি আলুর দাম দ্বিগুণ তিনগুন বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হলো বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাদা ও লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা দুই দিন আগে ছিল ৪০ টাকা। দেশি ছোট গোল আলু (পাকড়ি জাতের আলু) ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলেছেন, গত দুই দিনে বাজারে আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি এখন ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। আলুর এ মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে রোজার ঈদের পর থেকে। তখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আলুর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে ১ কোটি ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। ওই বছর দেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এ উৎপাদন দেশে আলুর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন। অন্য বছর চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় সচরাচর বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকত। মৌসুমের শেষে হিমাগারগুলোতে আলু অবিক্রিত থেকে যেত। বছর শেষে লোকসানের কথা বলতেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও দাম বাড়ছে। কারণ, হিসেবে কেউ বলছেন বাড়তি চাহিদার কথা, কেউ বলেছেন অন্য পণ্যের দামের প্রভাবের কথা। তবে, সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। এদিকে ঊর্ধ্বমুখী এ বাজারে আলুর বাড়তি দাম নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় এ পণ্যের চড়া দাম প্রভাব ফেলেছে মধ্যবিত্তদের দৈনন্দিন খরচেও। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে কোনো কোনো খুচরা বাজারে আলু ২০ টাকা বেশি দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাতে খুচরায় আলুর কেজি ৪০ টাকা ছাড়িয়ে দুয়েক জায়গায় ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। দেশি ছোট গোল আলু (পাকড়ি জাতের আলু) ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে রাখছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাজারে সাধারণত অ্যাসটরিক-গ্র্যানুলা (সাদা) ও কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু দেখা যায়। সাদা ও লাল উভয় জাতের আলুর দামে বড় কোনো পার্থক্য নেই। কার্ডিনাল আলু ডায়মন্ড আলু নামেও পরিচিত। আলু ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঈদের পর বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে আলুর দাম বাড়ছে। এছাড়া গত আড়াই মাস বাজারে একটু একটু করে বেড়েছে আলুর দাম। তাতে ঈদুল ফিতরের আগে হিমাগার থেকে যে আলু প্রতি কেজি ১০ টাকায় বাজারে এসেছিল, তা এখন ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বাজারে আসছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আলুর বড় কোনো সংকট নেই। সরবরাহ যা আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে চলবে। কিন্তু এরপরও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোন ব্যবসায়ী কীভাবে আলুর দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তা অনেকের জানা। সরকার চাইলে এসব বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ সাধারণ ভোক্তার কথা চিন্তা করে আমদানিও করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আলু মাঠ থেকে ওঠার পর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা বাজারে আসে। মাঝখানে একটা সময় থাকে হিমাগারে। বছরব্যাপী সংরক্ষণের এই সময়ে ব্যবসায়ীরাই মূলত এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। হিমাগারের মালিক অনেকে আলুর ব্যবসা করেন। কয়েক বছর ধরে দেশে আলুর ফলন ভালো। দেশে কমবেশি ১ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। তাতে দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তবে এবার আলুর দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলেছে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা; যা এ বছর ৫০ টাকা। সেই হিসাবে গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। আর টিসিবির দর অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো। এদিকে ঈদের আগের অস্থির হওয়া কাঁচা মরিচের দাম এখনো নাগালের বাইরে। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায়। মালিবাগ ও মগবাজারে সেই কাঁচা মরিচ খুচরায় বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আমদানি করা কাঁচা মরিচের সরবরাহ আরো বাড়লে দাম নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, কাঁচা মরিচের বাজার স্বাভাবিক হতে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ, এই সময়ে আমাদের দেশে উৎপাদনের মৌসুম শেষ হয়। তাতে দাম বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত