২০১০ সালে গ্রামের উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা মোট জনগোষ্ঠীর ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশের নিজের কোনো জমি ছিল না। ২০১৬ সালে এসে এ হার দাঁড়িয়েছিল ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের গ্রাম এলাকাগুলোতে ভূমিহীনদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার উচ্চ দারিদ্র্যসীমা থাকায় ৩৫ শতাংশের বেশির কোনো জমি নেই। শহর এলাকাগুলোকে উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা ১৯ দশমিক ১ শতাংশের নিজেদের কোনো জমি নেই। একযুগ আগেও এ হার অনেক বেশি ছিল। ২০১০ সালের জরিপে এ ধরনের ভূমিহীন ছিল ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায় ওই সময় শহর এলাকাগুলোতে ভূমিহীনদের হার কিছুটা বেড়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ভূমিহীনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে পরিবারের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি কিছুই নেই, কিন্তু পরিবারটি কৃষিনির্ভর, তারা ভূমিহীন। এ ছাড়া যে পরিবারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ি আছে, কিন্তু কৃষিজমি নেই, সেই পরিবারও ভূমিহীন গণ্য হবে। তবে বসতবাড়ির সঙ্গে কৃষিজমি থাকলে তারা ভূমিহীন হিসেবে খাসজমি পাবে না। ভূমিহীনদের আশ্রয়ণের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। সর্বশেষ ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প দুই নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইতিমধ্যে সারা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে নিজের কোনো জমি নেই এমন মানুষের সংখ্যা ৯১ লাখ। দেশের উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা ২৫ দশমিক ৮ শতাংশের নিজের কোনো জমি নেই। আবার হতদরিদ্রদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশের কোনো জমি নেই। ২০১০ সালে ভূমিহীনদের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। একযুগের ব্যবধানে ভূমিহীনদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারের নেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফলে অনেক ভূমিহীন মানুষের আশ্রয়ণ হয়েছে। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় রয়েছে দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। জনশুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে উচ্চ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জন। এ প্রসঙ্গে খানা আয়-ব্যয় জরিপের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জরিপের মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখে বলা যায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে ভূমিহীনদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে কমেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পই না, মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে, যার কারণে ভূমিহীনদের সংখ্যাও কমেছে।