ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রুপিতে বাণিজ্যের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ

রুপিতে বাণিজ্যের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্যের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবার কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রুপিতে করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এ সময় আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছিল, ব্যবসায়ীরাও এই দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরে, এবার তা বাস্তব রূপ পেল। এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য হবে। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ সেখান থেকে বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে, আর সে দেশে রপ্তানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, আজ থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। তার আশা, এই পদ্ধতি থেকে উভয় দেশই লাভবান হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিমুল্লাহ, বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন। বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক উভয় দেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক।

সেপ্টেম্বরে আসছে টাকা-রুপি কার্ড

দেশে ও প্রতিবেশী ভারতে বিল পরিশোধের জন্য আগামী সেপ্টেম্বরে ‘টাকা-রুপি কার্ড’ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশন পণ্য আমদানিতে রুপি ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়ার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এই জাতীয় কার্ড চালুর প্রক্রিয়ায় আছি।’ বর্তমানে পর্যটকরা ভারতে যাওয়ার আগে ডলার কিনতে বাধ্য হন। ভারতে যাওয়ার পর তারা সেই ডলার রুপিতে রূপান্তর করেন। নতুন কার্ড চালু হলে পর্যটকদের দুইবার মুদ্রা পরিবর্তনের লোকসান কমাবে। টাকা-রুপির ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের খরচ কমবে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। বক্তৃতাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রায় প্রস্তুত। সেপ্টেম্বর থেকে এটি চালু হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি বেঙ্গালুরুতে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি তাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার মধ্যে একটি ছিল রুপিতে ব্যবসা করা।’ ‘রুপিতে বাণিজ্য করায় একটা মেন্টাল গেমও আছে। ভারতীয়রা যখন নিজেদের কারেন্সিতে পণ্য কিনতে পারবে, তখন তারা সেটিকে নিজেদের পণ্য ভাববে। এতে আমাদের ট্রেড বাড়বে বলে আমি মনে করি’ -বলেন তিনি।

রুপিতে এলসি খুলল দুই প্রতিষ্ঠান

ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের পর পরই দুইটি প্রতিষ্ঠান রুপিতে এলসি খুলেছে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে রপ্তানি ও আমদানি করার লক্ষ্যে এলসি খোলায় লেনদেন শুরু হল। বাংলাদেশ থেকে তামিম অ্যাগ্রো লিমিটেড ১৬ মিলিয়নের বেশি রপ্তানি এলসি ও নিতা কোম্পানি লিমিটেড প্রায় ১২ মিলিয়নের এলসি খুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, রুপিতে লেনদেন চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে এলসি খোলা হয়েছে। তথ্য বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে এবং ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে। তবে রুপিতে লেনদেনের কারণে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। রুপিতে লেনদেনে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের লাভক্ষতির বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। আর অপেক্ষাকৃত ক্ষতির ইস্যুটি ক্লিয়ার। কিসের সঙ্গে তুলনা করে লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা হবে তার স্পষ্ট মানদণ্ড নেই। তবে ভারতীয় মুদ্রা রুপির ব্যবহার বাংলাদেশে বৈধতা পাচ্ছে। এতে রুপি শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু যদি টাকার বিনিময়ে রুপি নিতো তাহলে টাকাও শক্তিশালী হতো। তখন লাভ হতো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত