স্টকের মূল্যে পতন, ১ বিলিয়নের ওপরে থাকা ব্যবসায় আঘাত, উচ্চ ঋণের কারণে ২০২৩ সাল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের খুব একটা লাভজনক ছিল না। ২০২২ সালে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৮, চলতি বছরে সেটা নেমে এসেছে ২ হাজার ৬৪০-এ। সব মিলিয়ে এখন বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২.২ ট্রিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর মার্চ পর্যন্ত হিসাবে যেটা ছিল ১২.৭ ট্রিলিয়ন। বিলিয়নিয়ারদের অর্ধেকের বেশি আগের বছরের তুলনায় এ বছর গরিব হয়েছেন। এই তালিকায় ইলন মাস্কও রয়েছেন। যিনি ১ নম্বর ধনী ব্যক্তি থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে গিয়েছেন। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। দেশটির ৭৩৫ জন সমবেতভাবে প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ নিয়ে রয়েছেন এই তালিকায়। এরপরেই আছে চীনারা (হংকং ও ম্যাকাওসহ)। তালিয়ার রয়েছেন ৫৬২ চীনা বিলিয়নিয়ার। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ডলার। এর পরই ভারতের অবস্থান। ভারতের ১৬৯ জন বিলিয়নিয়ার এই তালিকার রয়েছেন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৭৫ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২৩ সালের ১০ মার্চ থেকে স্টকের দাম, বিনিময় মূল্য থেকে মোট সম্পদের পরিমাণ হিসাব করেছে। ২ হাজার ৬৪০ জন বিলিয়নিয়ারের এই তালিকায় থাকা প্রথম ২০ জনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো। বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের তালিকার শীর্ষে এবার উঠল নতুন নাম। ফ্রান্সের নাগরিক বার্নার্ড আর্নল্ট বিলাসদ্রব্যের ব্যবসায়ী। ৭৪ বছর বয়সি এই প্রকৌশলী ২০২৩ সালে ২১১ বিলিয়ন ডলারে ভর করে উঠে এসেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকার শীর্ষে। আর্নল্টের মোট আয় বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ৪৬০.২ বিলিয়ন ডলার। বার্নাড আর্নল্টের প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ মুনাফা এবং শেয়ারের দিক থেকে সব রেকর্ড ভেঙে গত ১২ মাসে ৫৩ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছে। এটি বিলিয়নিয়ারদের আয়ের ভেতর সর্বাধিক। সাধারণ মানুষের কাছে এলভিএমএইচের ব্র্যান্ডগুলো যতটা পরিচিত আর্নল্টের নাম ততটা পরিচিত নয়। এলভিএমএইচের আওতায় থাকা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- লুই ভুতোঁ, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, ফেন্দি, গিভেঞ্চি, টিফানি অ্যান্ড কো., হেনেসি, মোয়েট, স্টেলা ম্যাককার্টনি, সেফোরাস প্রভৃতি। টেসলা, স্পেসএক্স, টুইটারের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ১৮০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তিনি টুইটার কেনেন এবং কোম্পানির প্রায় ৭৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকও তিনি। ৫২ বছর বয়সি মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৮ হওয়ার আগেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। নানাবিধ কাজকর্ম জুটিয়ে প্রথমে পড়েন অন্টারিওর কুইনস ইউনিভার্সিটিতে। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস/সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০২ সালে রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালে তিনি টেসলার প্রধান নির্বাহী হন। ২০০০ সালে তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠা করা অনলাইন ব্যাংক এক্সডটকমের সঙ্গে একই রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান একত্রকরণ করেন এবং পেপাল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালে তিনি টেসলায় একজন বিনিয়োগকারী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি শীর্ষ ধনী ছিলেন। তবে টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে তার সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। ১১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক জেফ বেজোস পৃথিবীর শীর্ষ ধনীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। ১৯৯৪ সালে সিয়াটলে বাসার গ্যারেজ থেকে ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। তিনি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী থেকে নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নেমে আসেন। তিনি কোম্পানিটির ১০ শতাংশের কিছু কম অংশের মালিক। স্ত্রীর সঙ্গে ২০১৯ সালে ২৫ বছরের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটার পর তিনি তার তৎকালীন ১৬ শতাংশ শেয়ারের এক-চতুর্থাংশ তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন। বেজোস প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে দান করেছেন। যদিও কোন প্রতিষ্ঠানগুলো তার এই দানের অর্থ পেয়েছে, তা জানা যায়নি। তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ব্লু অরিজিন’র মালিক।