ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদেশে যাচ্ছেন এক লাখ নারী কর্মী

জোর দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণে
বিদেশে যাচ্ছেন এক লাখ নারী কর্মী

বছরে এক লাখের বেশি নারী এখন কাজ করতে বিদেশে যাচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ এবং যাচ্ছেন মূলত মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সৌদি আরব হচ্ছে তাদের প্রধান গন্তব্যস্থল, যাচ্ছেন প্রধানত গৃহকর্মী পেশায়। যদিও তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যাচ্ছেন জর্ডানে, যারা পোশাক খাতের কর্মী। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া শুরু হয়। প্রথম বছর বিদেশে যান ২ হাজার ১৮৯ জন নারী কর্মী। সেই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮ জন নারী কর্মী কাজ করতে বিদেশে গেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, প্রথম বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে যে পরিমাণ নারী কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন, পরের ১১ বছরের কোনো বছরই আর সে পরিমাণে যেতে পারেননি। শুরু হওয়ার প্রথম ৬ বছর সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ জন যেতে পেরেছিলেন। এমনকি ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেতে পেরেছেন গড়ে ৬০০ জন করে। তবে ২০০২ সাল থেকে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া বাড়তে থাকে এবং ২০০৬ সালে ১৮ হাজার নারী কর্মী বিদেশে যান। বাড়তে বাড়তে ২০১১ সালে তা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি, অর্থাৎ ৫৬ হাজার হয়। তারও দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৫ সালে বিদেশে যান এক লাখের বেশি নারী কর্মী। ব্যতিক্রম হিসেবে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার ধাক্কায় ২০২০ সালে তা কমে ২২ হাজারে নেমে আসে। যদিও পরের বছর ২০২১ সালেই তা বেড়ে হয় ৮০ হাজার এবং ২০২২ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৫৬ জনে উন্নীত হয়। মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৬ মাসে ৪২ হাজার ২২৬ জন নারী কাজ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। মাসিক প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বছর শেষে এবারও বিদেশগামী নারী কর্মীদের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান গন্তব্যস্থল সৌদি আরব হলেও জর্ডান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, লেবানন, যুক্তরাজ্য এবং মরিশাসে নারী কর্মীরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় যাচ্ছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, হংকং, সাইপ্রাস ইত্যাদি দেশেও নারীরা কাজ করতে যাচ্ছেন। দুই বছর ধরে কিছু নারী যাচ্ছেন ব্রুনেই, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, মোট নারী কর্মীর ৭০ শতাংশই যাচ্ছেন সৌদি আরবে। আর ৯ শতাংশ করে যাচ্ছেন জর্ডান ও ওমানে। মন্ত্রণালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহকর্মী পেশায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে গমন-ইচ্ছুক নারী কর্মীদের গৃহস্থালি কাজের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গন্তব্য, দেশের ভাষা, আইন, খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য ও সামাজিক রীতিনীতি বিষয়ে ধারণা দিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দেশের ৪৩টি কেন্দ্রে। এত দিন ৩০ দিন মেয়াদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকলেও ২ মাস আগে সরকার প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল ২ মাস করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সনদ দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২ হাজার ৬২৭ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিদেশগামী নারী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে সরকার এরই মধ্যে গঠন করেছে ‘নারী কর্মী সুরক্ষা সেল’। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে শ্রমকল্যাণ উইংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ‘সেফ হোম’। কোনো কারণে বিপদে পড়লে নারী কর্মীদের উদ্ধার করে এসব সেফ হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সোমবার বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ছাড়া নারীদের কেউ আর বিদেশে যেতেই পারবেন না। এ বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। আর বেশির ভাগ গৃহকর্মী পেশার নারী বিদেশে গেলেও জর্ডানে যাচ্ছেন প্রশিক্ষিত পোশাক কর্মীরা। জর্ডানে অন্তত ২৫ হাজার নারী পোশাক শ্রমিক রয়েছেন।’ কাজ করতে গিয়ে বিদেশে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন নারীরা, এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, ‘তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আর এ কারণেই আমরা চাই, যারা বিদেশে যাবেন, তারা যেন যত দূর সম্ভব, শিক্ষিত হয়ে যান। বিপদে পড়লে কেউ যেন অভিযোগ হলেও করতে পারেন।’ প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের একমাত্র জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত