ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১ হাজার ৮০১ কোটি টাকা
রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

দেশে ডলার সংকট এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে জরুরি আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভেও টান পড়ছে। নিট রিজার্ভ (আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি) কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে চলমান ডলার সংকটের মধ্যেই সুখবর মিলছে প্রবাসী আয়ে। গত জুন মাসের মতো জুলাইয়েও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাদের রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখলে মাস শেষে জুনের মতো জুলাইয়েও প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাস জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিনে ৯৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার (৯৯৫.৫৬ মিলিয়ন ডলার) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮০১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ দুই সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ১১ লাখ ডলার বা প্রায় ৭৭১ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স আসছে। আলোচিত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নতুন করে দেশের বাইরে গিয়েছেন। এখন সবাই বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকিং চ্যানেল নিরাপদ হওয়ায় এটিকে বেছে নিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত ৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক। গত জুন মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে এটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল। এর আগে সবশেষ গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছিল। টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে আর যেতে পারেনি রেমিট্যান্স। এরপর যথাক্রমে অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং মে মাসে ১৬৯ কোটি ডলার এবং ঈদুল আজহা ঘিরে জুন মাসে রেমিট্যান্স আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন অর্থবছরের প্রথম ১৪ দিনেই দেশে ৯৯ কোটি ৫৫ লাখ (৯৯৫ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলমান জুলাইয়ের দুই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৭ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭৭১ কোটি টাকার বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে তা ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৭২ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আর বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এসেছে। এর আগে জুনে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ৩ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সবশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে গেছেন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তারা। ব্যাংকিং চ্যানেল নিরাপদ হওয়ায় একে বেছে নিচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে প্রবাসী আয় বাড়ছে। তবে আলোচিত সময়ে এখন পর্যন্ত ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক ও সিটিজেন্স ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত