ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে মন্ত্রিসভার সায়
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্রিকসের উদ্যোগে স্থাপিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যোগ দেওয়ার চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ শীর্ষক চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন পায়। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০১৪ সালে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংক করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাজার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাণিজ্য এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। আটটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এই ব্যাংকে অংশগ্রহণ করেছে। সেই চুক্তি অনুসমর্থন করার প্রয়োজন ছিল, আজ মন্ত্রিসভা ওই চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ব্রিকস শব্দটি ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন ও সাউথ আফ্রিকা- এই চারটি দেশের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে গঠন হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই ব্রাজিলের ফোর্তালেজা শহরে এই চার দেশের প্রধানমন্ত্রীরা এক সভায় মিলিত হন। সেখানে ব্রিকস ব্যাংক বা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠনের ঘোষণা আসে। সে সময় বলা হয়েছিল, এসব দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক। পরে ভারতের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের ২০ অগাস্ট এনডিবির বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যোগদান অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশই ব্রিকস জোটের বাইরের প্রথম দেশ, যারা এই ব্যাংকের সদস্যপদ পেয়েছে। মূল জোটে যোগ দেওয়ার জন্যও সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে বাংলাদেশ। ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার চুক্তি অনুমোদন হওয়ায় কী সুবিধা পাওয়া যাবে- সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরইমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প আছে, ছয়শ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প পাইলাইনে আছে। এই চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থন হয়ে গেলে ওই প্রকল্পগুলো পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে ব্রিকসে চাঁদা দেয় জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, কিন্তু তার থেকে কয়েকগুণ বেশি অর্থায়ন আমরা পাচ্ছি।
বিশ্ব ব্যাংক, এডিবির মতো দাতা সংস্থা জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় না। এই ব্যাংকে সে বিষয়ে বিধিনিষেধ নেই। তারা এখানে অর্থায়ন করছে। অর্থায়নের জন্য আমাদের প্রকল্প বাছাই করছে, সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ব্রিকসের আওতায় নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মাহবুব বলেন, অন্যান্য আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকগুলোর প্যারালাল আরেকটি ব্যাংক করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকটি করা হচ্ছে। বিকল্প মুদ্রার মাধ্যমে যেন কাজ করতে পারে সেটি নিয়েও তারা কাজ করছে। আমরা এই ব্যাংকের সদস্যপদ ও শেয়ার নিয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আরো নিবিড় করতে চাই। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প পাইপলাইনে আছে। ওই দুটি প্রকল্পে এই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস এর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিতে জোটের নাম হয় ব্রিকস। এই জোটের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা করে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক-এনডিবি। ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। এর পরে ব্যাংকটিতে যুক্ত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু হয়।