জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিয়ান স্ট্যালিন

বাংলাদেশ দীর্ঘকাল একটি জনশক্তি রপ্তানিমুখী দেশ। সেই সুবাদে রেমিট্যান্সকে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে দেখে চলছে। কিন্তু এই ধারণার আমূল পরিবর্তন ও হালনাগাদ করার সময় এসেছে। গত বছরে প্রবাসীরা আয় পাঠানোয় রেকর্ড তৈরি করেছেন। ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ। আবার টানা ২ বছর জনশক্তি রপ্তানি কমছে। অনেক আগ থেকেই এই খাতে একটা মন্দাভাব লক্ষ করা যায়। তদুপরি বেশি আয়, নিম্নমুখী জনশক্তি রপ্তানি- দুটোই বাস্তবতা। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিদেশি শ্রমবাজার তার প্রয়োজন অনুযায়ী জনশক্তি আমদানি করে। অবশ্যই কোনো বিদেশি সরকারের জনশক্তি নীতির আলোকে নয়।

তবে এবার জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ রেকর্ড গড়েছে। বছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশ গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে গেছেন ১ লাখ ৯০ হাজার কর্মী। আর ৫১ হাজার জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে একক জেলা হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের শ্রম ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে বিদেশে কাজে যেতে আগ্রহীদের প্রচণ্ড ভিড়। তারপরও প্রয়োজনীয় তথ্য নিবন্ধনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টার অপেক্ষা করছেন তারা। দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে ফরমও জমা দিচ্ছেন তারা।

তাদের এ প্রতীক্ষার সুফল মিলছে জনশক্তি রপ্তানির প্রথম ছয় মাসের তথ্যে। তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার। অবশ্য ২০২২ সালে পুরো বছরে এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। কাজেই বড় কোনো বিপর্যয় না ঘটলে বাকি ৬ মাসে আগের সব রেকর্ড ভাঙার আশাবাদ জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের। এছাড়া সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাতের পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিও কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরের জুলাইতে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, মার্চে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, মে মাসে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং জুনে এসেছে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের পরেই রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রতি বছরই রেকর্ড পরিমাণ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, যার ধারাবাহিকতায় গত ৬ মাসেও রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে দেশে রেমিট্যান্স আসছে না। সেক্ষেত্রে রেমিট্যান্স পাঠাতে কোথায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে, এমনটিই বলছেন অর্থনীতিবিদরা।