ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবারও চরম খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় বিশ্ব

আবারও চরম খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় বিশ্ব

পণ্য ও পরিষেবার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস-সাধারণ পরিভাষায় একেই বলে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বজুড়ে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমার অর্থ, প্রান্তিক ও গরিব জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আরো কমে যাওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন আমিষ খেতে পারে না। এখন মাছ-মাংসের দাম আরও বেড়ে গেলে তাদের আমিষ গ্রহণ কমানো ছাড়া গতি নেই। নিম্নগামী আয়ে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমলে অর্থনীতি বাড়তি চাপে পড়ে, কমে বিস্তার। কোভিড ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে দুই বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ভাটার টান, তার ফলেই এই মূল্যস্ফীতির বাড়বাড়ন্ত। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটা সরবরাহের সংকটজনিত মূল্যস্ফীতি। সরবরাহ সংকট কেটে গেলে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে। কিন্তু অনেকেই আবার বলেছেন, দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, বছরের শেষ প্রান্তে আমেরিকার মূল্যস্ফীতির হার থাকবে ২ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে সেই হার গিয়ে ঠেকেছে ৭ শতাংশে। ২০২২ সালেও এমনই কিছু কি অপেক্ষা করছে, তা নিয়েই এখন অর্থনীতিবিদেরা ভাবিত।

এদিকে আরেকটি বড় ঘটনা হলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। টানা কিছুদিন বৃদ্ধির পর অবশ্য তেলের দাম এখন স্থিতিশীল হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, জ্বালানির দাম বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে মানুষের পকেটে। এ ছাড়া নজর রাখার মতো বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট। এই রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হলে গ্যাসের দামও বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে আসা খাদ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে। ফ্লেশার বলেন, ইউক্রেন-সংকটের ব্যাপক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পড়তে দেখা গেছে। ইয়েমেন প্রয়োজনীয় খাদ্যের ৯০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আমদানি হয় কৃষ্ণসাগর দিয়ে।

ইউক্রেনের শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবারও চরম খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় গোটা বিশ্ব। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এর ফলে বিশ্বব্যাপী আরেক দফা লাগামহীন হয়ে পড়বে খাবারের দাম। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে আমদানিনির্ভর দরিদ্র দেশগুলোতে। খাদ্য আমদানিতে মস্কোর ওপর নির্ভরতা আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ কৃষি গবেষক কার্লোস মেরা বলেন, রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম রফতানিকারক দেশ।

বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশের বেশি গম সরবরাহ করে তারা। অর্থাৎ ইউক্রেন যদি রপ্তানি করতে না পারে, তাহলে আমদানিকারকরা রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র দেশগুলোর মস্কোর ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে। এরই মধ্য বিশ্ববাজারে গম ও ভুট্টার দাম বেড়েছে। ফলে রাশিয়া থেকে আমদানি করতে হলে বাড়তি দামেই শস্য কিনতে হবে তাদের। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাপী দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যসামগ্রীর দাম। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের জুলাইয়ে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শস্য রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষর করে মস্কো-কিয়েভ। এর ফলে কিছুটা স্বস্তি আসে খাদ্যবাজারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত