সরকার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে গত বছর থেকেই। এর প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। তবে নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করার চেয়ে এবার বিদেশি ঋণের অর্থ খরচে মনোযোগ ছিল বেশি। সাধারণ সরকারের তহবিল থেকেই এডিপি বেশি বাস্তবায়িত হয়ে আসছিল।
যদিও পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের দাবি, কোনো ধরনের অর্থসংকটের মধ্যে নেই বাংলাদেশ, তবে চাপে আছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) বাস্তবায়ন ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। অথচ এর আগের অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে সরকারের এডিপি বাজেট ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১ হাজার ৪৫৯ প্রকল্পের অধীনে খরচ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় তা ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল। সে অর্থবছর করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প থমকে ছিল, যার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন কম ছিল। কিন্তু এ অর্থবছরে কোনো মহামারি না থাকলেও এডিপি বাস্তবায়ন খুবই কম হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সংকটে নয় আমরা চাপে আছি। যদি সংকট হতো আমরা বেতন ভাতা এগুলো কমাতাম, আমরা সেগুলো কমাইনি। কী ধরনের চাপে আছে সরকার- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা অবশ্যই চাপে আছি। তবে চাপের কারণটা টাকা নয়। প্রচুর চাহিদা দেশে, মানুষ সব জিনিস আজকেই চায়। সবাই চায় আমাদের গ্রামের সড়ক করে দেন, স্কুল করে দেন। তবে বাস্তবায়ন কম হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে পরিমাণ কাজ নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি সে পরিমাণ কাজ ¯’ানীয় মুদ্রায় বা বিদেশি মুদ্রায় বাস্তবায়নের জন্য যে প্রোগ্রামিং সেটিতে অনেক ঘাটতি আছে। আমরা বুঝতে পারিনি এভাবে এতটা হবে। দ্বিতীয় কারণ হলো আমরা কর্মক্ষম, কিš‘ আমরা ঈদের ছুটিতে দু’দিন এর জায়গায় আট দিনেও আসি না। কোথায় এ জাতি আছে পৃথিবীতে? আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এডিপির মোট খরচের মধ্যে বিদেশি ঋণের খরচ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ বা প্রকল্প সাহায্য থেকে খরচ হয়েছে মোট বাজেটের ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সরকারি অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে মোট বাজেটের ৮১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ৭৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, সর্বশেষ জুন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ আগের বছরের জুনে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। মন্ত্রণালয়গুলোর এডিপি বাস্তাবায়নের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তাদের যে বাজেট ছিল তার চেয়েও বেশি খরচ করেছে এ বিভাগ। এ বিভাগের জন্য এডিপি বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, কিš‘ তারা খরচ করেছে ৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ১০৩ শতাংশ খরচ করেছে তারা। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ প্রকল্প দেশের বাইরে দূতাবাস নির্মানের। কম বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৩৯ শতাংশের কিছু বেশি।