স্বর্ণ-রুপা কিংবা ডায়মন্ডের অলংকার ক্রয় ও বিক্রয় সহজ করার লক্ষ্যে ‘ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজুস কর্তৃক দেওয়া নির্দেশনায় নতুন কিংবা পুরাতন স্বর্ণ, রুপা ও ডায়মন্ড ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দেশনার পাশাপাশি বাজুস সদস্যদের বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। স্বর্ণ নীতিমালা (২০১৮) ও সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালা (২০২১) মোতাবেক স্বর্ণের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলমার্ক পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এ বিধান মেনে হলমার্ক নিশ্চিত করে গহনা বিক্রয়, বিপণন, প্রস্তুত ও সরবরাহ করতে হবে। নিম্নমানের গহনা প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনো কারিগর-ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্যাডমিয়াম পাইনের নামে নিম্নমানের কোনো গহনা প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রি করা যাবে না। জুয়েলারি ব্যবসার সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাইন ঝালার কোনো অলংকার প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সনাতন পদ্ধতির অলংকার শুধু ক্রেতা সাধারণের কাছে থেকে ক্রয় করা যাবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে স্বর্ণের ৪টি মান রয়েছে, যথাক্রমে ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ (৯৯ দশমিক ৫) ক্যারেট। এই মানের বাইরে কোনো স্বর্ণ বা স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করা যাবে না। এখানে উল্লেখ্য, তেজাবী স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা কোনো অবস্থাতেই ৯৯.৫-এর নিচে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সব হলমার্কিং কোম্পানিকে উক্ত নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ পরীক্ষা করতে হবে। স্বর্ণ বা স্বর্ণের অলংকারের গায়ে হাতে লেখা ক্যারেট সিল গ্রহণযোগ্য নয়। স্বর্ণের অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার কাছে থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বাদ দিতে হবে। এছাড়া স্বর্ণের অলংকার বিক্রয়ের সময় ক্রেতা সাধারণের কাছে থেকে গ্রাম প্রতি কমপক্ষে বা ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরি গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে কমপক্ষে বা ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
নিয়মানুযায়ী ক্রেতা সাধারণের কাছে থেকে সরকার নির্ধারিত হারে ভ্যাট সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে নিজ দায়িত্বে জমা করতে হবে। যদি কেউ এই নিয়ম অমান্য করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় এবং ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তাহলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা না করে বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। অর্ডারকৃত অলংকার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অথবা বুকিংকৃত অলংকার সরবরাহের ক্ষেত্রে যেদিন অর্ডার বা বুকিং দেওয়া হবে, সেদিনের বাজার মূল্য কার্যকর হবে। অর্ডার সরবরাহ গ্রহণের সময়সীমা সর্বোচ্চ এক মাস হবে। এক মাস পার হলে অর্ডারটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম হিসাবে প্রদত্ত টাকা/স্বর্ণ থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে বাকি টাকা/স্বর্ণফেরত দিতে হবে। ক্রেতা সাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য স্বর্ণের অলংকার বিক্রয়ের সময় কোনো প্রকার প্রলোভনমূলক উপহার প্রদান বা মূল্যছাড়/মজুরি ছাড়/ভ্যাট ছাড় দেওয়া যাবে না। বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে স্বর্ণ বা রুপার গহনা বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এর ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে আর্থিক জরিমানাসহ প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরাতন স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিক্রেতাকে পারচেজ রশিদ প্রদান করতে হবে। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের পারচেজ রসিদে বিক্রেতার যাবতীয় তথ্যাদি যেমন, নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি থেকে নিজ দায়িত্বে উভয় পাশের ফটোকপি রাখতে হবে। মূল মালিক ব্যতীত কোনো প্রতিনিধির কাছে থেকে অলংকার ক্রয় করা যাবে না। বিক্রেতার পাসপোর্টের মূলকপি থেকে নিজ দায়িত্বে ফটোকপি করে রাখতে হবে। বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি থেকে নিজ দায়িত্বে উভয় পাশের ফটোকপি রাখতে হবে। প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে স্বর্ণ ক্রয় করতে হবে। এয়ারপোর্টে ডিক্লেয়ারেশন/ট্যাক্সের আওতায় থাকলে ট্যাক্স প্রদানের ডকুমেন্ট (মূল কপি) সংরক্ষণ করতে হবে। ১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে কালার ও ক্ল্যারিটি সর্বনিম্ন মানদণ্ড হবে (আইজে) ও (এসআই-টু)।