ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এল নিনোর প্রভাব কৃষিতে

তাপমাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
এল নিনোর প্রভাব কৃষিতে

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু তিনটি ধাপের মাধ্যমে একটি চক্র অতিক্রম করে। এই চক্রকে বলা হয় এনসো চক্র। এনসো চক্রের তিনটি ধাপ: এল নিনো, লা নিনা। আর এ দুটি যখন প্রবল থাকে না, তখন তাকে বলা হয় এনসো নিউট্রাল। এল নিনো হলো শুষ্ক মওসুম, যখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম বৃষ্টি হয় এবং বন্যাও কম হয়। এ সময় তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। আর লা নিনার সময় বেশি বৃষ্টি আর বেশি বন্যা দেখা যায়। তাপমাত্রা কমে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে। স্প্যানিশ ভাষায় এল নিনো মানে ছেলে আর লা নিনা মানে মেয়ে। কিন্তু এই জোড়া শব্দ দুটি মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়কারী হিসাবেই পরিচিত। মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এদের সংজ্ঞা। এখানে তাপমাত্রার একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। দীর্ঘকালীন গড় তাপমাত্রা এই সীমার ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সে. নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় লা নিনা আর উপরে গেলে বলা হয় এল নিনো। তবে তাপমাত্রার এই ওঠা বা নামা পাঁচ মাসের বেশি স্থায়ী হলে তাকে বলা হয় এল নিনো বা লা নিনা এপিসোড। সচরাচর এ অবস্থা ৯ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। কখনো কখনো ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দুই থেকে সাত বছর পরপর এই চক্র ফিরে আসতে পারে। সাধারণত এল নিনো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লা নিনার গঠন শুরু হয়। অর্থাৎ এল নিনো হলে লা নিনা হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। তবে সব সময় এল নিনোর পরপরই লা নিনা যে হবেই এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ ১৯৭৬-৭৭ সালের এল নিনোর পর ৭৭-৭৮ সালে আবারো এল নিনোর ঘটনা ঘটেছিল। এরপর লা নিনা হয়েছে ১৯৮৮ সালে। ‘এল-নিনোর প্রভাব ক্রমেশ বাড়ছে। বৈশ্বিক জলবায়ুতে এর তীব্রতা চলতি বছরের শেষের দিকে শীর্ষে উঠবে।’

গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর বেশি উষ্ণ হয়ে আছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালে এ ধরনের এল-নিনো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। গড়ে ২ থেকে ৭ বছর পরপর এল-নিনো পরিস্থিতি হয়। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে শক্তিশালী এল-নিনোর প্রভাবে ঝড় ও বন্যায় প্রায় ২৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে খরচ হয়েছিল ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জুলাইয়েও সেই ধারা অব্যাহত আছে। পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধের দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও মে-জুনে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। জুনে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) জানিয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলমান এই আবহাওয়া এরইমধ্যে বাংলাদেশের কৃষিতে প্রভাব ফেলছে। কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে আউশ ধান এবং কাঁচা মরিচসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে, দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের চাষেও এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চরম আবহাওয়ার ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন সমগ্র বিশ্ব এল নিনোর নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। এটি মধ্য ও পূর্ব গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জলবায়ু প্যাটার্ন। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এল নিনো গড়ে প্রতি ২ থেকে ৭ বছরের মধ্যে ঘটে এবং প্রত্যেকবার সাধারণত ৯ থেকে ১২ মাস স্থায়ী হয়ে থাকে। এল নিনো মূলত দক্ষিণ দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকার হর্ন এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত