সরকারি খাদ্য মজুত সর্বোচ্চ

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিয়ান স্ট্যালিন

খাদ্যনিরাপত্তা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। তবে সংকটের সময়ে অনেকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। এ অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককে বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। সরকার গণখাতে বণ্টন বা বিক্রির জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্য মজুত করে। এর জন্য রয়েছে সাইলো, সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো (সিএসডি) এবং লোকাল স্টোরেজ ডিপো (এলএসডি)। জানা যায়, এগুলোর বর্তমান ধারণক্ষমতা ২১ লাখ টন। এ মজুত বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সরকার উপলব্ধি করেছে। ব্যবস্থা নিচ্ছে ধারণক্ষমতা ২০২৫ সাল নাগাদ ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার। চালের মজুত গড়ে তোলা হয় প্রধানত ফসলের মৌসুমে অভ্যন্তরীণভাবে ক্রয় করে। আর গম মজুত করতে হয় মূলত আমদানি করে। ক্ষেত্রবিশেষে চালও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তবে বড় ধরনের ফসলহানি না হলে চাল আমদানির প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা খুবই কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সময়ে সময়ে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ কার্যক্রম দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য কমে যায়। যেমনটা ঘটে চলছে একটি বছর ধরে। এ রকমটা আগেও ঘটেছে। বাজারে চাল আছে, আছে মজুতদারের কাছে। তবে তারা ক্রমান্বয়ে দাম বাড়িয়েই চলছে। চাপ পড়ছে আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার ওপর। সরকারি খাদ্যভান্ডার থেকে ওএমএস, ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখার মতো কর্মসূচিতে ঢালাওভাবে চাল ছাড়তে পারলে বাজারনির্ভরতা কমত। বাজারের নিয়মেই হ্রাস টানা পড়ত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতায়। কিন্তু এমনটি করার সুযোগ সরকারের হাতে নেই। সরকারি এ মজুত থেকে বিধিবদ্ধ রেশনিংয়ের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও কারাগারে কর্মরতদের নিয়মিত দিতে হয়। ১০ লাখ রোহিঙ্গার রেশনের জন্য টাকাটা জাতিসংঘ দিলেও জোগানটা দিতে হয় আমাদের মজুত থেকে। সুতরাং, সরকারি খাদ্যভান্ডারের ওপর বড় রকমের চাপ এমনিতেই আছে। অন্যদিকে সরকারের ক্রমসম্প্রসারমাণ সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বেশ কয়েকটি ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, ওএমএস, ১০ টাকা কেজি দরে চালে খাদ্য মজুত থেকেই মেটানোর কথা। কিন্তু মজুত যখন তলানিতে, তখন এগুলো সেভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে টাকা। বলা চলে, খাদ্য মজুত একরকম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে।

খাদ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী এবং সচিবকে নিয়ে রয়েছে ফুড প্ল্যানিং ও মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ)। তারা খাদ্য সংগ্রহের পরিমাণ, প্রক্রিয়া ও দাম অনুমোদন দেন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূচনাতে নির্ধারণ করে উৎপাদন ব্যয়। এর সঙ্গে মুনাফা যুক্ত করে এফপিএমইউ ধান ও চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে। ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যানুসারে ভারতের সরকারি খাদ্য মজুত ক্ষমতা ৮ কোটি ৭৭ লাখ টন। এর মাঝে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের গুদাম ও সাইল রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এতদবিষয়ক এজেন্সি ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া। তারা নিজস্ব গুদামের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতকে উৎসাহ দিয়ে ৮ থেকে১০ বছরের জন্য ভাড়া নেওয়ার চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা করে। জমি কেনা ও গুদাম নির্মাণ নির্দিষ্ট উদ্যোক্তার কাজ। এভাবে ধারণক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে চলছে। গুদামগুলোতে সময়মতো শস্য কেনা এবং নিয়মিত তা থেকে বণ্টনের জন্য বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে সে দেশটিতে। এতদবিষয়ে আমাদের নেটওয়ার্কও নেহাত ছোট নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সিভিল সাপ্লাই নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলা সরকার গড়ে তোলে। সেটা আমাদের আজকের খাদ্য অধিদপ্তরের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান। তবে তারা নীতিনির্ধারণ করে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়ছে পৃথিবী। দাবদাহের জেরে তাপমাত্রার পারদ ভাঙছে আগের সব রেকর্ড। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, দাবদাহের কারণে মহাসাগরগুলোও ‘নীরব ক্ষতির’ মুখে পড়ছে। চোখের আড়ালেই এটা ঘটছে। চলমান তাপপ্রবাহে নাকাল ইউরোপের জনজীবন। একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও চীনে। চলতি মাসের শুরুতে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ দিন রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছর সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসবের জেরে শুধু মানুষই নয়, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পৃথিবীর স্থল ও জলভাগও হুমকির মুখে পড়েছে। ২০১৮ সালে ইউরোপে তাপপ্রবাহের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মধ্য ও উত্তর ইউরোপে ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আর ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে ফল ও সবজির উৎপাদন।

‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বোরো উৎপাদনের প্রাক্কলন এখনো প্রকাশ করেনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বোরো মৌসুমের ধানের হিসাব ধরলে চলতি বছরে মোট উৎপাদন ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি টন হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, এবার বোরোর ফলন হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ টন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। খাদ্য অধিদপ্তর মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান ও চাল কেনা শুরু করে। এ পর্যন্ত স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ১০ লাখ ১৩ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর ১৫ লাখ ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগস্ট পর্যন্ত শস্য কেনা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম ফসল বোরো। এটি দেশের বার্ষিক মোট ধান উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমন ও বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। খাদ্যশস্য সংগ্রহও এখন পর্যন্ত ভালো হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা বোরো কেনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আছি। তবে বিষয় এগুলো রাখবে কোথায়?’ খাদ্য অধিদপ্তরের ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৮ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছে। এটি আগের বছরেও প্রায় একই পরিমাণ ছিল। চলতি অর্থবছরের ১৩ জুলাই পর্যন্ত মোট খাদ্যশস্য বিতরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার টন।