ভোজ্যতেল আটা ও পেঁয়াজ নিয়ে সরকারি প্রতিবেদন

আমদানির চেয়ে খুচরা মূল্য অনেক বেশি

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে মূল্য হ্রাস পেয়েছে, দেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে মসুর ডাল ও রসুনের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে স্থানীয় বাজার মূল্যের সম্পর্ক ইতিবাচক বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। জুনে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সপ্তম সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের উপস্থাপন করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আমদানি করা পণ্যের আমদানি মূল্যের তুলনায় খুচরা মূল্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। অত্যাবশকীয় পণ্য বিপণন পরিবেশক নিয়োগ আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ কৃষি পণ্যের উৎপাদন মূল্যের তুলনায় খুচরা মূল্যের পার্থক্য অত্যধিক বলে চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়। অত্যাবশকীয় পণ্যের সাপ্লাই চেইনের কোন ধাপে বেশি মুনাফা হচ্ছে, তা বের করার জন্য সমীক্ষা পরিচালনা করা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরিবহণ ব্যয় কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাপী দাম কমলেও প্রায় সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েক মাস ধরে বেড়েই চলেছে। বড় বড় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারে সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন সংসদে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটা ঠিক যে, বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটাও তো সইতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।’

টিসিবির ভূমিকা নগণ্য : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে দেশের ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ চাহিদার ৮৫ শতাংশ, আদা ৬৫ শতাংশ ও রসুন ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে পণ্য নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন মৌসুমে কৃষক কাঙ্ক্ষিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং লিন পিরিয়ডে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এভাবে পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বদলে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় মৌসুমি শুল্কারোপের সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাজার মনিটরিং : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি করতে পারলেও জনবল ঘাটতি থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং কার্যক্রম কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, বাজার মনিটরিংয়ে ফিজিক্যাল এ্যাক্টিভিটি টেকসই সমাধান নয়। পণ্য বাজার ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ও পলিসিগত দূর্বলতা রয়েছে। বাজারে যথাযথ প্রতিযোগিতার ঘাটতি রয়েছে বলেও স্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়।

যেসব সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে: পণ্য বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি দূর করতে বেশকিছু সুপারিশও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, অত্যাবশকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে টিসিবির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়িয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে পলিসিগত ও কাঠামোগত ঘাটতি অনুসন্ধ্যান করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে প্রতিযোগিতা কমিশন। অত্যাবশকীয় পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শতভাগ মার্জিনের শর্ত শিথিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডলার সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করা হয়।