বিদেশে প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশন পরিচালনায় নীতিমালা পরিবর্তন

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক চেয়ারম্যানরা একই ব্যাংকের সহযোগী (সাবসিডিয়ারি) অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী পদে থাকতে পারবেন না বলে গত বছর নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পরিপালনের বাধ্যবাধকতা ছিল। ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশনা দেয়। ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগের সময় পিছিয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল।

বিএবির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার বিদেশে অবস্থিত সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। ফলে চেয়ারম্যানদের শুধু দেশে অবস্থিত ব্যাংকের সিকিউরিটিজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পদ ছাড়লেই চলবে। আগের মতো ব্যাংকের ফাউন্ডেশনের পদে থেকে চেয়ারম্যান ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির টাকা খরচের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ ধরে রাখতেই বিএবি এক বছর ধরে নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল এবং এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকও করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে শেষ পর্যন্ত সায় দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা চলমান থাকায় ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে ও ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাহী কমিটি, নিরীক্ষা কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ওই ব্যাংকের সহযোগী বা ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত কোনো কোম্পানি বা ফাউন্ডেশনের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি এমন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত থাকলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগের জন্য চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত নতুন এক প্রজ্ঞাপনে আগের নির্দেশনায় বড় ধরনের শিথিলতা আনা হয়েছে। নতুন ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বর্তমান বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) আহরণ ও বিদেশে কার্যরত এক্সচেঞ্জ হাউস, মানি ট্রান্সফার অপারেটর বা ফাইন্যান্স কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পরিচালনা সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতি থাকলে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহারের জন্য ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। পাশাপাশি এটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আয়-ব্যয়, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে বিদেশে স্থাপিত ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় আগের নিয়ম প্রযোজ্য হবে না বলে নতুন প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই দুই ক্ষেত্র ছাড়া ব্যাংকের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আগের নিষেধাজ্ঞাই বহাল থাকবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যাংকগুলোর খুব বেশি প্রতিষ্ঠান নেই, যেসব প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যানদের আগ্রহ ছিল বিদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশন নিয়ে। কারণ, এতে বিদেশে ভ্রমণ ও অবস্থানের সুযোগ নেওয়া যায়, আবার ব্যাংকের অর্থ খরচ করে দেশে বিভিন্ন সুবিধাও নেওয়া যায়। আগের প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, সুষ্ঠুভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃক নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা পালন আবশ্যক। এজন্য ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতের জন্য তৈরি হওয়া প্রতিবন্ধকতা পরিহার হওয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অধিকতর শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতে ওই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে সরে যেতে বলেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।