বদলে যাচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের চিত্র
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বড় জাহাজে (মাদার ভেসেল) বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার পর ওই তেল সাগরে ছোট অয়েল ট্যাঙ্কারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ওই তেল ছোট জাহাজে করে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সমুদ্র ও নদীপথে তেল পরিবহন করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তেলবাহী জাহাজ। নদীতে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশ দূষিত হয়। দেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের এই চিরচেনা দৃশ্য এখন পাল্টে যাচ্ছে। আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পাইপলাইনে খালাস হবে বড় জাহাজ থেকে। খালাসের পর কক্সবাজার থেকে পাইপলাইনে চলে আসবে চট্টগ্রামে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি পাইপলাইনে চলে যাবে ঢাকায়। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদীপথে জ্বালানি তেল পাঠাতে হবে না। জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন প্রকল্পের অধীনে ৮০০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর ফলে দেশের জ্বালানি তেল পরিবহনে এই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। প্রকল্প চালুর পর আগামী ২০২৫ সাল থেকে এর সুফল পাবে সারা দেশের মানুষ। তখন পরিবহন জটিলতায় ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আর কখনো জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হবে না। জ্বালানি তেল পরিবহনের সংকট দূর করতে বর্তমান সরকার তিনটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি একটি প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে রয়েছে। এই তিনটি প্রকল্পের মধ্যে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। অন্যদিকে ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ প্রকল্পের অধীনে ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের অধীনে ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পাইপলাইনে শুরু হবে তেল পরিবহন। এখন বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল সড়ক ও সমুদ্রপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এতে একদিকে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নদী, সমুদ্রে তেল পড়ে পরিবেশ দূষণ হয়। ২০২৫ সালের পর এটি পাল্টে যাবে। আমদানি করা জ্বালানি তেলের দুই-তৃতীয়াংশ পরিবহন হবে পাইপলাইনের মাধ্যমে। পাইপলাইনে মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম, পরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে ভারতের শিলিগুঁড়ি থেকে আমদানি করা তেল পাইপলাইনে চলে আসবে সৈয়দপুরে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫৮ লাখ মেট্রিক টন। রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার চাহিদা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ১২ লাখ মেট্রিক টন। বিপুল পরিমাণ এই জ্বালানি তেল এতদিন কিছু সমুদ্রপথে অয়েল ট্যাঙ্কারে, কিছু সড়কপথে পরিবহন করা হতো। কিন্তু বৈরী পরিবেশের কারণে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতো। অন্যদিকে মাঝেমধ্যে অয়েল ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় তেল নদীর পানিতে মিশে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলে বিপিসি ৬৫ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর মধ্যে ৩৯ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ছিল ডিজেল। ক্রুড অয়েল আমদানি করেছে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের ৬৩ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ২৪৯ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হবে। এর মধ্যে ২৩২ কিলোমিটার পাইপলাইন এরইমধ্যে বসানো শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে চলতি বছরের মধ্যে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে এই পাইপলাইন। প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহনের সিদ্ধান্ত হলেও বিপিসি চাইলে একই পাইপলাইন ব্যবহার করে অন্যান্য তেলও পরিবহন করতে পারবে।