বড় পরিবর্তন প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে সবাই
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বড় পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দৃশ্যপটে। কারণ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স পেতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রথাগত ফিজিক্যাল ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো। গত ২১ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত প্রায় এক মাসে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) প্রায় ৬০টি নামের ছাড়পত্র আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক, অন্তত দুটি এমএফএস প্রদানকারী ও দুটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রয়েছে। অনলাইন আবেদনের সময়সীমা ১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন পায়নি। তবে বাণিজ্য সংস্থাগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনের সময় আরো এক মাস বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ব্যাংকাররা বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ বাড়তে থাকায় ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ কীভাবে বদলে যাবে- যেমন: কতগুলো লাইসেন্স দেওয়া হবে, এসব ব্যাংকের অপারেশনাল ফ্রেমওয়ার্ক, প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের কর্মসংস্থানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব, এসব ব্যাংক যেসব পণ্য দেবে- তা নিয়ে ব্যাংকাররা ভাবছেন। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কাজকর্ম মূলত ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে করা হয়। অনেক প্রথাগত ব্যাংক ক্রমেই এ প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। এটি ব্যাংকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা উভয়ের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে: প্রথাগত ফিজিক্যাল ব্যাংকের সঙ্গে ডিজিটাল ব্যাংকের পার্থক্য গড়ে দেয় কোন জিনিসটি? একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংক ও প্রচলিত ব্যাংকের মধ্যে অপারেশনাল পার্থক্য ন্যূনতম। তারপরও প্রায় সব ব্যাংকই যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংকিং জগতে প্রবেশ করার কথা ভাবছে।’এছাড়া দুটি প্রধান টেলিকম অপারেটরও ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ দিকে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘বাংলালিংক সবসময় গ্রাহকদের উন্নততর সেবা দিতে চায় এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ তবে আবেদনের জন্য সময় একেবারেই কম দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য আগ্রহী পক্ষগুলো চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। গ্রামীণফোনের মুখপাত্র হোসেন সাদাত বলেন, আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের আওতায় আনতে এবং দেশের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশন অর্জনে অবদান রাখতে তাদের কোম্পানি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সেজন্য (ডিজিটাল ব্যাংকের) গাইডলাইনটি মূল্যায়ন করার সময় আমরা ভবিষ্যতের উপযোগী ডেটা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ওপর ফোকাস রেখে আমাদের নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ চালিয়ে যাব। এটি গ্রাহক ভ্যালু বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের এক নম্বর নেটওয়ার্ক হিসেবে আমাদের অবস্থানকে মজবুত করবে,’ বলেন তিনি। শিল্পসংশ্লিষ্টদের তথ্যানুসারে, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক স্পন্সর যেহেতু সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হতে পারবে, তাই অনেক ব্যাংক যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। যেমন, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একটি বিশেষ কনসোর্টিয়াম গঠনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি সাতটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা একটি সভা করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র থেকে জানা গেছে, আলোচনায় বসা ব্যাংকগুলো হলো: ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানায় সূত্র। এই সাত ব্যাংকের প্রত্যেকটিই অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের সুযোগ খতিয়ে দেখছে। আরো কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ডও ডিজিটাল ব্যাংকে অংশীদারিত্বের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিকে ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড এরইমধ্যে একটি ডিজিটাল ব্যাংকে অংশীদারিত্ব পেতে ১২.৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।