ব্যাংকিং ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ব্যাকিং খাতে গত জুনে এক মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৩১,১৮১ কোটি টাকা যা গত অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যা আগের মাস মে শেষে ছিল ১৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গেল বছরের নভেম্বর থেকে দেশের ব্যাংকিং খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। ওই মাসে আমানত কমে ৩,১৫৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও ব্যাংকিং খাতে আমানত কমেছে ১,৩৯৮ কোটি টাকা। যদিও তার পর থেকে প্রত্যেক মাসে আমানত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে আমানতে বেড়েছে প্রায় ২৪,৯০২ হাজার কোটি টাকা। মে মাসে আমানত বেড়েছে ১৫,৮৮১ কোটি টাকা। জুনে এসে আমানত বেড়েছে ৩১,১৮১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমানত বাড়ে ৩৪,১৩২ কোটি টাকা- যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশে গত ১ বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে। যে কারণে মানুষের আমানতের টাকা ভেঙে খেতে হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে আমানতের পরিমাণ আরো বাড়ত।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ বাড়লেও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত সেভাবে বাড়ছে না। উল্টো এই ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য ঋণাত্মকে চলে গেছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমানত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো নতুন করে ইন্টারেস্ট যোগ। এছাড়া জুনে বিদায়ী অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সেগুলোও টাকায় রূপান্তর হয়ে আমানতে যোগ হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেটে নতুন করে যে টাকা ইনজেক্ট করছে সেগুলোও ব্যাংকের আমানত হিসাবে ঢুকছে যার কারণে ডিপোজিট বাড়ছে। তবে ডিপোজিট বাড়া আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ভালো কারণ অনেক ব্যাংক লিকুইডিটি সংকটে রয়েছে।’ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরছে, এটা সত্য। তবে এটি সব ব্যাংকে সমানভাবে বাড়ছে না। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে এখনো গ্রাহকরা ভরসা করতে পারছেন না। এসব কারণে গ্রাহকরা কনভেনশনাল বা মূলধারার ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা করছে। কারণ, কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে এখনো বড় ধরনের কেলেংকারির ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে ২০২২ সালের মে শেষে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি।

চলতি বছরের মে মাসে-এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া জুন শেষে এর পরিমাণ দেখা গেছে ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন মানি ইনজেক্ট করার কারণে নতুন করে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। যা ব্যাংকে নতুন করে যোগ হবে বলেও মনে করেন ব্যাংকাররা। এদিকে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে আমানত এর পরিমাণ বাড়লেও অর্থবছর শেষে ৮.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়েছে। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে ৮.৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিদায়ী অর্থবছরে ডলার সংকটের কারণে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। যার কারণে বাজার থেকে অনেক টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা চলে যাওয়া মানে অর্থনীতিতে ওই টাকা নেই। অর্থনীতিতে এ পরিমাণ টাকা না থাকার কারণে আমানতে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে।’