অস্থির ডিমের বাজার

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নতুন উৎপাদন খরচের প্রভাবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় ডিমের বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি হালি ডিমের দাম এখন ৫৫ টাকা, যা ডজন হিসেবে কিনতে গেলে খরচ পড়ছে ১৬০-১৬৫ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা চাইলেও দরদাম করে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম প্রায় ১০ শতাংশ এবং মুরগির দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা অনুমোদন করেছে, যা এক বছর আগেও ছিল ১৪০ টাকার আশপাশে। এই উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করার পর থেকেই মুরগির দাম ১৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান প্রতিটি ডিমের উৎপাদন ১১ টাকার বেশি। তবে এই উৎপাদন খরচ নির্ধারণ নিয়েও সরকার কাজ করছে, দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা যায়। পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। যে কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। খামারিকে প্রটেকশন না দিলে অবস্থা ধীরে ধীরে জটিল হতে থাকবে। এজন্য যারা উৎপাদন ছেড়ে গেছে তাদেরকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিতে হবে।’ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করার কাজ করছি, যেন বাজারে পণ্যগুলোর দাম কেমন থাকবে সেটা সব সময় বোঝা যায়।’ এদিকে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির ঈদের কারণে বেশ কিছুদিন ডিম ও মুরগির চাহিদা কম ছিল। যে কারণে বাজারে পণ্যগুলোর দামও ছিল কম। অনেকে উৎপাদন খরচের নিচে এসব পণ্য বিক্রি করেছেন। এখন যখন চাহিদাটা স্বাভাবিক হয়েছে তখন তা বর্তমান উৎপাদন থেকে মেটানো যাচ্ছে না। কারণ ফিডের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে অনুযায়ী ডিম ও মুরগির দাম পাননি খামারিরা। যে কারণে স্থায়ীভাবেই গত ৩ বছরে ৪০ হাজারের মতো লেয়ার ফার্ম ও ৩০ হাজারের বেশি ব্রয়লার ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া গত কিছুদিনের ব্যাপক গরম ও ঢাকার বাইরে প্রচণ্ড লোডশেডিংও মুরগির মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাও উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘খামার বন্ধ হতে হতে ডিমের উৎপাদনটা ধীরে ধীরে কমেছে, কিন্তু চাহিদা বেড়েছে। এই গ্যাপটার কারণে বাজারে দামটা বাড়ছে। অনেক দিন লোকসান গুনতে গুনতে অনেক খামারিই স্থায়ীভাবে ডিমের উৎপাদন থেকে সরে এসেছে।’ তবে ব্রয়লার মুরগির খামারিরা অনেকেই এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মুরগি উৎপাদন করে দিচ্ছে। যে কারণে ব্রয়লারের উৎপাদন এখনো একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, মুরগি ও ডিমের বাজারে যেন আর হঠাৎ এমন অস্থিরতা তৈরি না হয় সেজন্য সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের সমন্বয়ে একটা নীতি ঠিক করার কাজ করছে সরকার।