ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট

ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা

আবারো বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা

দেশে প্রতিদিন বাণিজ্যকভাবে ৪ কোটির মতো ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় ফের বেড়েছে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিমের দাম।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় খুচরা বিক্রেতারা আজ প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। খুচরা বাজারে ডিমের দাম প্রতি ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে। ফলে, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়ছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় খুচরা বিক্রেতারা আজ প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। মিরপুরের পল্লবী এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার বলেন, ‘গত সাত দিন ধরে ডিমের দাম বাড়ছে। আমরা ফার্মের এক হালি ডিম (লাল) ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি করছি।’ তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, সম্প্রতি প্রচণ্ড গরমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লেয়ার মুরগি মারা গেছে।

এছাড়া, গরমে মুরগিগুলো ঠিকমতো খেতেও পারেনি। ফলে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, তেজগাঁও বাজারে প্রতিদিন ২০-২২ লাখ পিস ডিমের চাহিদা আছে। এর বিপরীতে এখন সর্বোচ্চ ১৪-১৫ লাখ পিস ডিম পাওয়া যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার আমরা ১ হাজার ১৯০ টাকায় ১০০ পিস ডিম কিনেছি। পরের দিন একই পরিমাণ ডিমের দাম ছিল এক হাজার ২০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল এক হাজার ৪০ টাকা, বলেন তিনি। প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান সম্প্রতি জানান, বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এটি পুরো সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একজন ডিলার জানান, এ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কিছু ব্যবসায়ী বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। পর্যাপ্ত ডিম থাকলেও তারা সরবরাহ কম করছে। তাই দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। আর ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারা দেশের খামারগুলো থেকে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস।

তিন-চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম আবারো কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। স্থানীয় হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কম এবং ভারত থেকে দুই দিন ধরে আমদানি কম হওয়াকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাজারে গত বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। পরের দিন শুক্রবার কিছুটা কমে দেশি পেঁয়াজ ৭০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে ভালো মানের (পাবনার) দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। এ ধরনের পেঁয়াজ খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কেজি ৮০ টাকা দরে। তবে এর আকারভেদে স্থানীয় ছোট বাজার ও মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা দরে। এছাড়া দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বড় বাজারগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা দরে। মহল্লার দোকানে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে আরো ৫ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

টিসিবির তথ্যমতে, এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৮২ শতাংশ বেশি এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩৩ শতাংশ বেশি। কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ট্রেডার্সের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দাম কৃষক পর্যায়ে বেড়েছে। তিন-চার দিন ধরে রাজশাহী-পাবনার হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ৫০ বস্তা কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থকে ৪০ বস্তা। তাছাড়া ভারত থেকেও আমদানি কিছুটা কম। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব ভারতীয় পেঁয়াজে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত